যাকাত
وَ اَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتُوا الزَّکٰوۃَ وَ ارۡکَعُوۡا مَعَ الرّٰکِعِیۡنَ ﴿۴۳﴾
আর নামায কায়েম কর, যাকাত দান কর এবং নামাযে অবনত হও তাদের আথে, যারা অবনত হয়। (সুরা বাকারা-৪৩)
وَ اَنۡفِقُوۡا مِنۡ مَّا رَزَقۡنٰکُمۡ مِّنۡ قَبۡلِ اَنۡ یَّاۡتِیَ اَحَدَکُمُ الۡمَوۡتُ فَیَقُوۡلَ رَبِّ لَوۡ لَاۤ اَخَّرۡتَنِیۡۤ اِلٰۤی اَجَلٍ قَرِیۡبٍ ۙ فَاَصَّدَّقَ وَ اَکُنۡ مِّنَ الصّٰلِحِیۡنَ ﴿۱۰﴾
আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় কর। অন্যথায় সে বলবেঃ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (সুরা মুনাফিকুন-১০)
لَیۡسَ الۡبِرَّ اَنۡ تُوَلُّوۡا وُجُوۡهَکُمۡ قِبَلَ الۡمَشۡرِقِ وَ الۡمَغۡرِبِ وَ لٰکِنَّ الۡبِرَّ مَنۡ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃِ وَ الۡکِتٰبِ وَ النَّبِیّٖنَ ۚ وَ اٰتَی الۡمَالَ عَلٰی حُبِّهٖ ذَوِی الۡقُرۡبٰی وَ الۡیَتٰمٰی وَ الۡمَسٰکِیۡنَ وَ ابۡنَ السَّبِیۡلِ ۙ وَ السَّآئِلِیۡنَ وَ فِی الرِّقَابِ ۚ وَ اَقَامَ الصَّلٰوۃَ وَ اٰتَی الزَّکٰوۃَ ۚ وَ الۡمُوۡفُوۡنَ بِعَهۡدِهِمۡ اِذَا عٰهَدُوۡا ۚ وَ الصّٰبِرِیۡنَ فِی الۡبَاۡسَآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ حِیۡنَ الۡبَاۡسِ ؕ اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ صَدَقُوۡا ؕ وَ اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡمُتَّقُوۡنَ ﴿۱۷۷﴾
সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার। (সুরা বাকারা-১৭৭)
তওবার অপূর্ব নিদর্শন
একদা মা’য়িয বিন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে পবিত্র করুন’। তিনি বললেন, ‘ধিক তোমাকে! তুমি চলে যাও। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও এবং তওবা করো।’ বর্ণনাকারী বলেন, তিনি চলে গেলেন এবং সামান্য একটু দূরে গিয়ে পুনরায় ফিরে আসলেন এবং আবারও বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে পবিত্র করুন’। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবারও তাকে পূর্বের ন্যায় বললেন। এভাবে তিনি যখন চতুর্থ বার এসে বললেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমি তোমাকে কোন জিনিস হতে পবিত্র করব?’ তিনি বললেন, ‘যেনা হতে’। তার কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) (ছাহাবীগণকে) জিজ্ঞেস করলেন, ‘এ লোকটি কি পাগল?’ লোকেরা বলল, ‘না, সে পাগল নয়।’ তিনি আবার বললেন, ‘লোকটি কি মদ পান করেছে?’ তৎক্ষণাৎ এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে তার মুখ শুঁকে তার মুখ হতে মদের কোন গন্ধ পেল না।
অতঃপর তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি সত্যিই যেনা করেছ?’ সে বলল, ‘হ্যাঁ’। এরপর তিনি রজমের নির্দেশ দিলেন, তখন তাকে রজম করা হল। এ ঘটনার দু’তিন দিন পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) (ছাহাবীগণের নিকট) এসে বললেন, ‘তোমরা মা’য়িয বিন মালিকের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর।’ বর্ণনাকারী বলেন, ‘তখন ছাহাবীগণ বললেন, আল্লাহ মা’য়িয বিন মালিককে ক্ষমা করুন।’ এরপর রাসূল (সাঃ) বললেন, ‘সে এমন তওবা করেছে, যদি তা সমস্ত উম্মতের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া হয়, তবে তা সকলের জন্য যথেষ্ট হবে।’
এরপর আযদ বংশের গামেদী গোত্রীয় এক মহিলা এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে পবিত্র করুন।’ তিনি বললেন, ‘ধিক তোমাকে! তুমি চলে যাও। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও এবং তওবা কর।’ তখন মহিলাটি বলল, ‘আপনি মা’য়িয বিন মালিককে যেভাবে ফিরিয়ে দিয়েছেন, আমাকেও কি সেভাবে ফিরিয়ে দিতে চান? আমার গর্ভের এই সন্তান যেনার’। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি (সত্যই অন্তঃসত্তা)?’ মহিলাটি বলল, ‘হ্যাঁ’। তখন তিনি বললেন, ‘যাও, তোমার পেটের বাচ্চা প্রসব হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর’। বর্ণনাকারী বলেন, ‘আনছারী এক লোক মহিলাটির সন্তান হওয়া পর্যন্ত তাকে নিজের তত্ত্বাবধানে নিয়ে গেলেন। সন্তান প্রসব হওয়ার পর ঐ লোকটি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর খেদমতে এসে বলল, গামেদী মহিলাটি সন্তান প্রসব করেছে।’ এবার তিনি (সাঃ) বললেন, ‘এ শিশু বাচ্চাটিকে রেখে আমরা মহিলাটিকে রজম (পাথর মেরে হত্যা) করতে পারি না। কারণ তাকে দুধ পান করানোর মতো কেউ নেই।’ এ সময় জনৈক আনছারী দাঁড়িয়ে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি তার দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করব’। রাবী বলেন, তখন তিনি তাকে রজম করলেন। অন্য এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মহিলাটিকে বললেন, ‘তুমি চলে যাও এবং সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর’। অতঃপর সন্তান প্রসবের পর যখন সে আসল, তখন তিনি বললেন, ‘আবার চলে যাও এবং তাকে দুধ পান করাও এবং দুধ ছাড়ানো পর্যন্ত অপেক্ষা কর।’ পরে যখন বাচ্চাটির দুধ খাওয়া বন্ধ হয়, তখন মহিলাটি বাচ্চার হাতে এক খণ্ড রুটির টুকরা দিয়ে তাকে সাথে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর খেদমতে হাযির হল। এবার মহিলাটি এসে বলল, ‘হে আল্লাহর নবী! এই দেখুন আমি তাকে দুধ ছাড়িয়েছি, এমনকি সে নিজে হাতে খানাও খেতে পারে’। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বাচ্চাটিকে একজন মুসলমানের হাতে তুলে দিলেন। পরে মহিলাটির জন্য গর্ত খোঁড়ার নির্দেশ দিলেন। তার জন্য বক্ষ পর্যন্ত গর্ত খনন করা হল । এরপর জনগণকে নির্দেশ দিলেন, তারা মহিলাটিকে রজম করল।
খালিদ বিন ওয়ালীদ (রাঃ) সম্মুখে অগ্রসর হয়ে তার মাথায় এক খণ্ড পাথর নিক্ষেপ করলে রক্ত ছিটে এসে তার মুখমণ্ডলের উপর পড়ল। তখন তিনি মহিলাটিকে গাল-মন্দ করলেন। তা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘থাম, হে খালেদ! যার হাতে আমার জীবন তাঁর কসম করে বলছি, এই মহিলা এমন তওবা করেছে, যদি রাজস্ব আদায়ে কারচুপিকারী ব্যক্তিও এমন তওবা করত, তাহলে তাকেও ক্ষমা করা হত’। অতঃপর তিনি ঐ মহিলার জানাযার ছালাত আদায়ের আদেশ দিলেন এবং নিজে তার জানাযা পড়লেন। অতঃপর তাকে দাফন করা হল।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার জানাযা পড়লে ওমর (রাঃ) বললেন, ‘হে আল্লাহর নবী! আপনি তার জানাযা পড়লেন? অথচ সে যেনা করেছে?’ জবাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘এ মহিলা এমন তওবা করেছে যে, তা সত্তর জন মদীনাবাসীর মধ্যে বণ্টন করে দিলেও যথেষ্ট হয়ে যেত। তুমি কি এর চাইতে উত্তম কোন তওবা পাবে, যে ব্যক্তি স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে?’।
[বুরায়দাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মুসলিম হা/১৬৯৫-৯৬, মিশকাত হা/৩৫৬২ ‘দণ্ডবিধি’ অধ্যায়]
শিক্ষা:
- বান্দার গোনাহ মাফের অন্যতম মাধ্যম হল তওবা। সে এর মাধ্যমে পূত-পবিত্র হয়ে মহান আল্লাহর প্রিয়ভাজন হতে পারে।
আল্লাহকে স্বরণে সুন্নাত
আল্লাহর যিকরের ব্যাপারে লক্ষ্যনীয় বিষয়সমূহ:
১। আল্লাহর স্মরণ হচ্ছে ইবাদতের ভিত্তি। সকল অবস্থা এবং সময়ে এটি ইবাদতকারীদের আল্লাহর সাথে সম্পর্ক করে দেয়। আয়িশা (রা) বলেন,
আল্লাহর রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বদা আল্লাহর স্মরণ করতেন। আল্লাহর সাথে এই সম্পর্ক হচ্ছে জীবন, তাঁর নৈকট্য হচ্ছে সফলতা এবং সন্তুষ্টি এবং পথভ্রষ্টতা এবং বিপর্যয় থেকে বহু দূরে থাকার উপায়।
২। আল্লাহর স্মরণ মুনাফিক্বদের থেকে বান্দাকে আলাদা করে। কারণ মুনাফিক্বদের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা আল্লাহকে খুবই কম স্মরণ করে।
৩। শয়তান বান্দাদের উপর বিজয়ী হতে পারে না যদি না তারা আল্লাহর স্মরণ থেকে অমনোযোগী হয়। আল্লাহর স্মরণ হচ্ছে ঢালের ন্যায়।
৪। যিকর হচ্ছে বান্দার সুখের উপায়।
৫। আল্লাহকে সর্বদা স্মরণ করা। জান্নাতে বান্দাদের কোন আফসোস থাকবে না শুধু দুনিয়ার ঐ সময়ের জন্য যা সে আল্লাহর স্মরণ ব্যতীত কাটিয়েছে।
৬। আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে স্মরণ করেন যে আল্লাহকে স্মরণ করে। একজন ব্যক্তি অনেক খুশি হয় যখন তাকে সংবাদ দেয়া হয় যে শাসকরা তাকে নিয়ে আলোচনা করেছে তাদের সমাবেশে এবং তার প্রশংসা করেছে। সুতরাং কিরূপ উপলব্দি হওয়া উচিত, আল্লাহ, যিনি বিশ্বজগতের রব্ব, এর চেয়ে উত্তম সমাবেশে তাকে স্মরণ করেছেন?
৭। আল্লাহর স্মরণ দ্বারা এমন কিছু বোঝায় না যে দুই একটি শব্দ উচ্চারন করা যখন হৃদয় কি বলছে তা থেকে উদাসীন থাকে এবং আল্লাহর মহত্বতা এবং আনুগত্য থেকে মন উদাসীন থাকে। সুতরাং জিহ্বা দ্বারা স্মরণ করার নিঃসন্দেহে এর দিকে মনোযোগ দেয়া, অর্থের দিকে খেয়াল করাকে অন্তর্ভুক্ত করে।
মাদক দ্রব্য সেবন করা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّمَا الۡخَمۡرُ وَ الۡمَیۡسِرُ وَ الۡاَنۡصَابُ وَ الۡاَزۡلَامُ رِجۡسٌ مِّنۡ عَمَلِ الشَّیۡطٰنِ فَاجۡتَنِبُوۡهُ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ ﴿۹۰﴾
“হে মুমিনগণ! এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নিধারক শরসমূহ, এসব শয়তানের অপবিত্র কাজ ছাড়া আর কিছু নায়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৯০]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«كل مسكر خمر وكل خمر حرام».
“প্রত্যেক নেশা জাতীয় দ্রব্য হোল মদ আর সকল প্রকার মদ হারাম।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৭৩৪।]
«لعن الله الخمر وشاربها سافيها وبائعها ومتبائعنا وعاصرها ومعتصرها وحاملها والمحمولة إليه وآكل ثمنها».
“আল্লাহ মদ পানকারী, বিক্রেতা, ক্রেতা, প্রস্তুতকারী, বহনকারী এবং যার জন্য বহন করা হয় সকলকে অভিসম্পাত দিয়েছেন।” (আবু দাউদ, হাদীস নং ৩১৮৯।)
قول الله تبارك وتعالى: العظمة إزاري والكبرياء ردائي فمن نازعني فيهما القيته في النار».
“আল্লাহ তা’আলা বলেন, মহত্ব আমার পরিচয় আর অহংকার আমার চাদর, যে ব্যক্তি এ দু’টি নিয়ে টানা হেচাড়া করবে আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৪৬০।)