- পানির পাত্র ব্যবহার করা : রাসুলুল্লাহ (সা.) পানির উৎস মুখ ডুবিয়ে পানি পান করার পরিবর্তে পানি পাত্রে নিয়ে পান করতে বলেছেন। কেননা পানির উৎস মুখ ডুবিয়ে দিলে রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে। তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যেন কুকুরের মতো পানিতে মুখ দিয়ে পান না করে, এক হাতেও যেন পানি পান না করে। যেমন একদল করে থাকে। যাদের প্রতি আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৪৩১)
জাহান্নাম
سَنُلۡقِیۡ فِیۡ قُلُوۡبِ الَّذِیۡنَ کَفَرُوا الرُّعۡبَ بِمَاۤ اَشۡرَکُوۡا بِاللّٰهِ مَا لَمۡ یُنَزِّلۡ بِهٖ سُلۡطٰنًا ۚ وَ مَاۡوٰىهُمُ النَّارُ ؕ وَ بِئۡسَ مَثۡوَی الظّٰلِمِیۡنَ ﴿۱۵۱﴾
খুব শীঘ্রই আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করবো। কারণ, ওরা আল্লাহর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করে যে সম্পর্কে কোন সনদ অবতীর্ণ করা হয়নি। আর ওদের ঠিকানা হলো দোযখের আগুন। বস্তুতঃ জালেমদের ঠিকানা অত্যন্ত নিকৃষ্ট। (সুরা আলে ইমরান-১৫১)
رَبَّنَاۤ اِنَّکَ مَنۡ تُدۡخِلِ النَّارَ فَقَدۡ اَخۡزَیۡتَهٗ ؕ وَ مَا لِلظّٰلِمِیۡنَ مِنۡ اَنۡصَارٍ ﴿۱۹۲﴾
হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয় তুমি যাকে দোযখে নিক্ষেপ করলে তাকে সবসময়ে অপমানিত করলে; আর জালেমদের জন্যে তো সাহায্যকারী নেই। (সুরা আলে ইমরান-১৯২)
اِنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا بِاٰیٰتِنَا سَوۡفَ نُصۡلِیۡهِمۡ نَارًا ؕ کُلَّمَا نَضِجَتۡ جُلُوۡدُهُمۡ بَدَّلۡنٰهُمۡ جُلُوۡدًا غَیۡرَهَا لِیَذُوۡقُوا الۡعَذَابَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ کَانَ عَزِیۡزًا حَکِیۡمًا ﴿۵۶﴾
এতে সন্দেহ নেই যে, আমার নিদর্শন সমুহের প্রতি যেসব লোক অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করবে, আমি তাদেরকে আগুনে নিক্ষেপ করব। তাদের চামড়াগুলো যখন জ্বলে-পুড়ে যাবে, তখন আবার আমি তা পালটে দেব অন্য চামড়া দিয়ে, যাতে তারা আযাব আস্বাদন করতে থাকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, হেকমতের অধিকারী। (সুরা নিসা-৫৬)
একজন খুনীর তওবা ও জান্নাত লাভ
বনী ইসরাঈলের জনৈক ব্যক্তি নিরানব্বই জন মানুষকে হত্যা করে দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ আলেমের সন্ধান করল। অতঃপর তাকে একজন খৃষ্টান পাদ্রীর কথা বলা হলে সে তার নিকট এসে বলল যে সে নিরানব্বইজন ব্যক্তিকে হত্যা করেছে। এমতাবস্থায় তার জন্য তওবার কোন সুযোগ আছে কি? পাদ্রী বলল, নেই। ফলে লোকটি পাদ্রীকেও হত্যা করল। এভাবে তাকে হত্যা করে সে একশত সংখ্যা পূর্ণ করল। অতঃপর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আলেমের সন্ধান করায় তাকে একজন আলেমের কথা বলা হল। সে তাঁর নিকট গিয়ে বলল যে সে একশ জনকে হত্যা করেছে, এখন তার জন্য তওবার কোন সুযোগ আছে কি? আলেম বললেন, ‘হ্যাঁ, আছে। তার ও তার তওবার মাঝে কিসে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করল? তুমি অমুক জায়গায় চলে যাও। সেখানে কিছু লোক আল্লাহর ইবাদত করছে। তুমিও তাদের সাথে ইবাদত কর। আর তোমার দেশে ফিরে যাবে না। কেননা ওটা খারাপ জায়গা।’ লোকটি নির্দেশিত জায়গার দিকে চলতে থাকল ।
অর্ধেক পথ অতিক্রম করলে তার মৃত্যুর সময় উপস্থিত হল। সে তার বক্ষদেশ দ্বারা সে স্থানটির দিকে ঘুরে গেল। মৃত্যুর পর রহমতের ও আযাবের ফেরেশতামণ্ডলীর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিল। রহমতের ফেরেশতা বলল, এ লোকটি নিখাদ তওবার মাধ্যমে আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে। পক্ষান্তরে আযাবের ফেরেশতা বলল, লোকটিতো কখনও কোন ভাল কাজ করেনি। এমন সময় অন্য এক ফেরেশতা মানুষের রূপ ধারণ করে তাদের নিকট আগমন করলেন। তখন তারা তাকেই এ বিষয়ের শালিস নিযুক্ত করল। তিনি বললেন, ‘তোমরা উভয় দিকের জায়গার দূরত্ব মেপে দেখ। যে দিকটি নিকটবর্তী হবে, সে দিকেরই সে অন্তর্ভুক্ত হবে’। আল্লাহ তা’আলা সামনের ভূমিকে আদেশ করলেন, তুমি মৃত ব্যক্তির নিকটবর্তী হয়ে যাও এবং পিছনে ফেলে আসা স্থানকে আদেশ দিলেন, তুমি দূরে সরে যাও। অতঃপর জায়গা পরিমাপের পর যেদিকের উদ্দেশ্যে সে যাত্রা করেছিল, তারা তাকে সেদিকেরই এক বিঘত পরিমাণ নিকটবর্তী পেল। ফলে তাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হল এবং রহমতের ফেরেশতা তার জান কবয করল।
[আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, বুখারী হা/৩৪৭০, মুসলিম হা/২৭৬৬, মিশকাত হা/২৩২৭ ‘দো’আ সমূহ’ অধ্যায়, ‘ইস্তিগফার ও তওবা’ অনুচ্ছেদ]
শিক্ষা:
- পাপী যদি পাহাড় পরিমাণও পাপ করে তবুও সে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হয়ে খালেছ অন্তরে তওবা করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করতে পারেন। যেমন তিনি বলেন, ‘বল, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ আল্লাহর অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না; আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দিবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (যুমার ৫৩)। তিনি আরো বলেন, ‘তিনিই তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন ও পাপ মোচন করেন এবং তোমরা যা কর তিনি তা জানেন’ (শূরা ২৫)।
- মূর্খ ব্যক্তি কোন সমস্যায় পড়লে কুরআন-সুন্নাহতে অভিজ্ঞ কোন আলেমের কাছে জিজ্ঞেস করে তার সমস্যার সমাধান করে নিবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা না জান তাহলে সুস্পষ্ট দলীল-প্রমাণসহ জ্ঞানীদের কাছে জিজ্ঞেস কর’ (নাহল ৪৪)।
- কোন বিষয়ে যথাযথভাবে না জেনে সিদ্ধান্ত দেওয়া যাবে না।
পানি পান করার ৮ সুন্নত
- পরিষ্কার পাত্রে পান করা : রাসুলুল্লাহ (সা.) পানির পাত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রাতের বেলা পানপাত্র আন্দোলিত না করে (পরিষ্কার না করে) যেন পানি পান না করে। তবে পাত্র ঢাকা অবস্থায় থাকলে ভিন্ন কথা। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৪৩১)
- বিসমিল্লাহ পাঠ করা : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন তোমরা পান করো, তখন শুরুতে বিসমিল্লাহ এবং শেষে আল-হামদুলিল্লাহ পাঠ করবে। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৮৮৫)
- ডান হাতে পান করা : মহানবী (সা.) বলেন, তোমরা বাম হাতে আহার কোরো না। কেননা শয়তান বাম হাতে আহার করে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩২৬৮)
- বসে পান করা : নবীজি (সা.) দাঁড়ানো, হাঁটা বা শোয়া অবস্থায় পানি পান না করে বসে বসে পানি পান করার নির্দেশ দিয়েছেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলেন, দাঁড়িয়ে, হেঁটে বা শুয়ে পানি পান করলে শ্বাসনালিতে পানি ঢুকে যাওয়ার ভয় থাকে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) দাঁড়িয়ে পানি পান করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২০২৪)
- তিন শ্বাসে পান করা : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা এক চুমুকে উটের মতো পানি পান কোরো না; বরং দুই-তিনবার (শ্বাস নিয়ে) পান কোরো। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৮৮৫)
- গ্লাসে নিঃশ্বাস না ফেলা : নবীজি (সা.) বলেন, তোমরা (পান করার সময়) পাত্রে নিঃশ্বাস ফেলো না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৫৪)
- পান শেষে আলহামদুলিল্লাহ! : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন তোমরা পান করো, তখন শুরুতে বিসমিল্লাহ এবং শেষে আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করবে। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৮৮৫)
আল্লাহ সবাইকে সুন্নত অনুসরণের তাওফিক দান করুন। আমিন।
সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়া
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
اِنَّ الَّذِیۡنَ یَرۡمُوۡنَ الۡمُحۡصَنٰتِ الۡغٰفِلٰتِ الۡمُؤۡمِنٰتِ لُعِنُوۡا فِی الدُّنۡیَا وَ الۡاٰخِرَۃِ ۪ وَ لَهُمۡ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ ﴿ۙ۲۳﴾
“যারা সতী-সাধ্বী ঈমানদার নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা ইহকাল ও পরকালে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ২৩]
«كل مسكر خمر وكل خمر حرام».
কোনো সতী-সাধ্বী নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়াকে কযফ বলে (৩৩) বলে ।
«لعن الله الخمر وشاربها سافيها وبائعها ومتبائعنا وعاصرها ومعتصرها وحاملها والمحمولة إليه وآكل ثمنها».
“আল্লাহ মদ পানকারী, বিক্রেতা, ক্রেতা, প্রস্তুতকারী, বহনকারী এবং যার জন্য বহন করা হয় সকলকে অভিসম্পাত দিয়েছেন।” (আবু দাউদ, হাদীস নং ৩১৮৯।)