ক্ষমা
اِنَّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ الَّذِیۡنَ هَاجَرُوۡا وَ جٰهَدُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ ۙ اُولٰٓئِکَ یَرۡجُوۡنَ رَحۡمَتَ اللّٰهِ ؕ وَ اللّٰهُ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۲۱۸﴾
নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে ও যারা হিজরত করেছে এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে, তারা আল্লাহর রহমতের আশা করে। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা বাকারা-২১৮)
وَّ اسۡتَغۡفِرِ اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ کَانَ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا ﴿۱۰۶﴾ۚ
আর তুমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা নিসা-১০৬)
اِلَّا مَنۡ ظَلَمَ ثُمَّ بَدَّلَ حُسۡنًۢا بَعۡدَ سُوۡٓءٍ فَاِنِّیۡ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۱۱﴾
‘তবে যে যুগ্ম করে। তারপর অসৎকাজের পরিবর্তে সৎকাজ করে, তবে অবশ্যই আমি অধিক ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ । (সুরা নমল-১১)
ثُمَّ اَفِیۡضُوۡا مِنۡ حَیۡثُ اَفَاضَ النَّاسُ وَ اسۡتَغۡفِرُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۱۹۹﴾
অতঃপর তোমরা প্রত্যাবর্তন কর, যেখান থেকে মানুষেরা প্রত্যাবর্তন করে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা বাকারা-১৯৯)
মূসা (আঃ) ও মালাকুল মউত
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মালাকুল মউতকে মূসা (আঃ)-এর নিকট পাঠানো হয়েছিল। ফেরেশতা যখন তাঁর নিকট আসলেন, তখন তিনি তাঁকে চপেটাঘাত করলেন। এতে তাঁর একটা চোখ নষ্ট হয়ে গেল। তখন ফেরেশতা তাঁর রবের নিকট ফিরে গেলেন এবং বললেন, আপনি আমাকে এমন এক বান্দার নিকট পাঠিয়েছেন যে মরতে চায় না। আল্লাহ বললেন, তুমি তার নিকট ফিরে যাও এবং তাকে বল, সে যেন তার একটি হাত একটি গরুর পিঠে রাখে, তার হাত যতগুলো পশম ঢাকবে তার প্রতিটি পশমের বদলে তাকে এক বছর করে জীবন দেয়া হবে । মূসা (আঃ) বললেন, হে রব! অতঃপর কি হবে? আল্লাহ্ বললেন, অতঃপর মৃত্যু। মূসা (আঃ) বললেন, তাহলে এখনই হোক। রাবী বলেন, তখন তিনি আল্লাহর নিকট আরয করলেন, তাঁকে যেন ‘আরযে মুকাদ্দাসা’ (জেরুজালেম) হতে একটি পাথর নিক্ষেপের দূরত্বের সমান স্থানে পৌঁছে দেয়া হয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন, আমি যদি সেখানে থাকতাম তাহলে অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পথের ধারে লাল টিলার নীচে তাঁর কবরটি দেখিয়ে দিতাম। [বুখারী হা/৩৪০৭ ‘নবীদের কাহিনী’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩১, মুসলিম হা/২৩৭২]
শিক্ষা:
- মৃত্যু চিরসত্য, অনিবার্য। এথেকে পালানোর কোন পথ নেই।
সাহরি করা সুন্নাত
সাহরি খাওয়া সুন্নাত। হাদিসে পাকে সাহরি খাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘আমাদের ও অন্যান্য কিতাবের অধিকারী জাতির (ইয়াহুদি ও খ্রিস্টান) রোজার পার্থক্য সাহরি খাওয়া।’ (মুসলিম)
অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা সাহরি না খেয়ে রোজা পালন করে থাকে। এ জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন অল্প হলেও সাহরি খাওয়া সুন্নাত। সাহরি খাওয়ায় রয়েছে কল্যাণ।
সাহরি খাওার সুন্নাতসমূহ-
- সাহরি খাওয়ার সময় : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতের শেষ মুহূর্তে সাহরি খাওয়ার কথা বলেছেন। রাতের মধ্য ভাগে কিংবা আজানের আগ মুহূর্তে সাহরি খাওয়া উভয়টিই সুন্নাতের পরিপন্থী। হাদিসে পাকে এসেছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সাহরি বিলম্বে (রাতের শেষভাগে) গ্রহণ করো।’ (তিবরানি)
- সাহরি খাওয়ার উত্তম সময় : আজানের কিছুক্ষণ আগেই সাহরি খাওয়া উত্তম এবং সুন্নাত। এ সম্পর্কে হাদিসে পাকে এসেছে- হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহরি ও (ফজর) নামাজের মধ্যে পঞ্চাশ আয়াত তেলাওয়াত পরিমাণ সময় অবশিষ্ট থাকত।’ (বুখারি)
আধুনিক যুগের ফকিহদের মতে, কুরআনুল কারিমের পঞ্চাশ আয়াত তারতিল সঙ্গে তথা যথানিয়মে ধীরস্থিরভাবে তেলাওয়াত করতে বিশ মিনিট সময় প্রয়োজন হয়। তাই আজানের ২০ মিনিট আগে সাহরি খাওয়া শেষ করা সুন্নাত।
- সাহরিতে খাবারের পরিমাণ : ঘরে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার থাকার পরও অনেকে সামান্য খাবার ও পানি দিয়ে নামমাত্র সাহরি করে থাকেন। এমনটি ঠিক নয়। কেননা সাহরি খাওয়ার মাধ্যমে রোজা শুরু করা সুন্নাত। সাহরিতে রয়েছে কল্যাণ। তাই খুব বেশি এবং একেবারে কম না খেয়ে পরিমিত পরিমাণ তথা সুন্নাত পদ্ধতিতে সাহরি খাওয়া উত্তম। সাহরিতে অধিক খাবার খেলে বান্দা রোজার কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়। কেননা অতিরিক্ত খাবার শরীরে আলস্য তৈরি করে। ফলে মানুষ যেমন ইবাদতমুখী হতে পারে না আবর জৈবিক চাহিদা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে অনাহারী ও ক্ষুধায় ক্লেষ্ট মানুষের কষ্ট অনুভব করা যায় না। পক্ষান্তরে নাম মাত্র খাবার বা পানি গ্রহণ সাহরি করলে শারীরিক শক্তি একেবারেই নিঃশেষ হয়ে যায়। ফলে ইবাদত-বন্দেগি করাই দুষ্কর হয়ে পড়ে।
- আজান চলাকালীন সাহরি খাওয়া : রোজা ফরজ ইবাদত। অনেক সময় দেখা যায়, সাহরি খাওয়া অবস্থায় আজান শুরু হয়ে যায়। এমনটি কোনোভাবে কাম্য নয়। ফরজ রোজা পালনের জন্য সাহরির সময়ের প্রতি সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। সুতরাং কারো সাহরির সময় যদি আজান হয়ে যায়; তবে সঙ্গে সঙ্গে খাবার পরিহার করতে হবে।
- সাহরি খাওয়ার পর না শোয়া : সাহরি খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়া সুন্নাতের পরিপন্থী কাজ। শারীরিকভাবেও তা ক্ষতিকর। সাহরি খেয়ে জামাআতে নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে মসজিদে উপস্থিত হওয়া উত্তম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান মাসে ফজরের নামাজ আদায় করে মসজিদে ইবাদত করতেন, সাহাবিদের দ্বীনের শিক্ষা দিতেন। সূর্যোদয়ের পর ইশরাকের নামাজ আদায় করে ঘরে ফিরতেন।
মিথ্যা শপথ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من خلف على يمين صبر يقطع بها مال امرئ مسلم وهو فيها وهو عليه غضبان» الله فاجر لقي
“যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথ করে এবং তা দ্বারা কোনো মুসলিমের সম্পদকে অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করে সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে এমন অবস্থায় যে, আল্লাহ তার ওপর ক্রোধান্বিত।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৬৪৭।)
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الكبائر : الإشراك بالله وعقوق الوالدين وقتل النفس واليمين
“কবীরা গুনাহ হলো আল্লাহর সাথে শরীক করা । মাতা-পিতার নাফরমানী করা, হত্যা করা ও মিথ্যা শপথ করা”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬১৮২।)