ধৈর্য
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اسۡتَعِیۡنُوۡا بِالصَّبۡرِ وَ الصَّلٰوۃِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ مَعَ الصّٰبِرِیۡنَ ﴿۱۵۳﴾
হে মুমিনগণ, ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। (সুরা বাকারা-১৫৩)
وَ لَنَبۡلُوَنَّکُمۡ بِشَیۡءٍ مِّنَ الۡخَوۡفِ وَ الۡجُوۡعِ وَ نَقۡصٍ مِّنَ الۡاَمۡوَالِ وَ الۡاَنۡفُسِ وَ الثَّمَرٰتِ ؕ وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِیۡنَ ﴿۱۵۵﴾ۙ
আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। (সুরা বাকারা-১৫৫)
لَتُبۡلَوُنَّ فِیۡۤ اَمۡوَالِکُمۡ وَ اَنۡفُسِکُمۡ ۟ وَ لَتَسۡمَعُنَّ مِنَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ وَ مِنَ الَّذِیۡنَ اَشۡرَکُوۡۤا اَذًی کَثِیۡرًا ؕ وَ اِنۡ تَصۡبِرُوۡا وَ تَتَّقُوۡا فَاِنَّ ذٰلِکَ مِنۡ عَزۡمِ الۡاُمُوۡرِ ﴿۱۸۶﴾
অবশ্যই তোমাদেরকে তোমাদের ধন-সম্পদ ও তোমাদের নিজ জীবন সম্পর্কে পরীক্ষা করা হবে। আর অবশ্যই তোমরা শুনবে তোমাদের পূর্বে যাদের কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের পক্ষ থেকে এবং মুশরিকদের পক্ষ থেকে অনেক কষ্টদায়ক কথা। আর যদি তোমরা ধৈর্য ধর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর তবে নিশ্চয় তা হবে দৃঢ় সংকল্পের কাজ। (সুরা আলে ইমরান-১৮৬)
اِنۡ تُبۡدُوا الصَّدَقٰتِ فَنِعِمَّا هِیَ ۚ وَ اِنۡ تُخۡفُوۡهَا وَ تُؤۡتُوۡهَا الۡفُقَرَآءَ فَهُوَ خَیۡرٌ لَّکُمۡ ؕ وَ یُکَفِّرُ عَنۡکُمۡ مِّنۡ سَیِّاٰتِکُمۡ ؕ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرٌ ﴿۲۷۱﴾
তোমরা যদি সদাকা প্রকাশ কর, তবে তা উত্তম। আর যদি তা গোপন কর এবং ফকীরদেরকে তা দাও, তাহলে তাও তোমাদের জন্য উত্তম এবং তিনি তোমাদের গুনাহসমূহ মুছে দেবেন। আর তোমরা যে আমল কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত। (সুরা বাকারা-২৭১)
মদীনায় হিজরতের পথে
বারা ইবনু আযেব (রাঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, একদা আযেব (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ)-কে বললেন, হে আবূ বকর! যে রাতে আপনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে (হিজরতের উদ্দেশ্যে) সফর করেছিলেন, সে রাতে আপনারা কি করেছিলেন আমাকে অবহিত করুন। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমরা একদিন একরাত পথ চলার পর যখন দ্বিপ্রহর হল এবং পথ-ঘাট এমন শূন্য হল যে, কাউকেও চোখে পড়ছিল না। এমন সময় একটি লম্বা পাথর আমাদের নযরে আসল। তার পাশে যথেষ্ট ছায়া ছিল। সেখানে রোদ পড়ত না। আমরা সেখানে অবতরণ করলাম এবং আমি নিজ হাতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জন্য কিছু জায়গা সমান করলাম, যাতে তিনি শয়ন করতে পারেন। এরপর একটি চাদর বিছিয়ে দিয়ে তাঁকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি ঘুমান। আমি আপনাকে পাহারা দিচ্ছি ও সবদিক খেয়াল রাখছি। তিনি ঘুমিয়ে পড়লে আমি বের হয়ে চতুর্দিক থেকে তাকে পাহারা দিতে থাকলাম। তাঁকে পাহারা দেওয়ার সময় হঠাৎ দেখি একজন মেষচারক আমাদের ন্যায় বিশ্রাম নেওয়ার জন্য পাথরটির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোমার বকরীগুলিতে দুধ আছে কি?’ সে বলল, ‘হ্যাঁ।’ আমি বললাম, ‘তুমি কি তা (আমাদের জন্য) দোহন করবে?’ সে বলল, ‘হ্যাঁ।’ অতঃপর সে একটি বকরী ধরে এনে একটি পাত্রে সামান্য দুধ দোহন করল। আমার নিকট একটি পাত্র ছিল, যা আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জন্য এনেছিলাম, যেন তা দিয়ে তিনি তৃপ্তি সহকারে পানি পান করতে এবং ওযূ করতে পারেন। অতঃপর আমি দুধ নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকটে এসে তাঁকে ঘুম থেকে জাগানো ভাল মনে করলাম না। কিছুক্ষণ পরে তাঁকে জাগ্রত অবস্থায় পেলাম। তখন দুধ ঠাণ্ডা করার জন্য তাতে পানি মিশালাম, ফলে দুধের নিম্নভাগ পর্যন্ত ঠাণ্ডা হয়ে গেল। অতঃপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! পান করুন।’ তিনি পান করলেন। এতে আমি খুব সন্তুষ্ট হলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমাদের রওয়ানা হওয়ার সময় হয়েছে কি?’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ’। আবূ বকর (রাঃ) বলেন, সূর্য ঢলে যাওয়ার পর আমরা রওয়ানা হলাম। এদিকে সুরাকা ইবনু মালেক আমাদের অনুসরণ করছিল। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আমাদের নিকটে শত্রু এসে পড়েছে’। তিনি বললেন, ‘চিন্তা কর না, আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন’ (তওবা ৪০)। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সুরাকার জন্য বদদো’আ করলেন, ফলে তার ঘোড়াটি তাকে নিয়ে শক্ত মাটিতে পেট পর্যন্ত দেবে গেল। তখন সুরাকা বলল, ‘আমার বিশ্বাস তোমরা আমার জন্য বদদো’আ করেছ। তোমরা আল্লাহর নিকট আমার জন্য দো’আ কর, আল্লাহ তোমাদের সাহায্যকারী হবেন। আমি তোমাদের নিকট অঙ্গীকার করছি যে, তোমাদের অন্বেষণকারীদেরকে (শত্রুদের) আমি ফিরিয়ে দিব’। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার জন্য দো’আ করলে সে মুক্তি পায়। অতঃপর যার সাথেই সুরাকার দেখা হয়েছে, তাকেই সে বলেছে, ‘আমি তোমাদের কাজ সেরে এসেছি। এদিকে তারা কেউ নেই’। এমনিভাবে যার সাথেই তার সাক্ষাৎ হত, তাকেই সে ফিরিয়ে দিত। [বুখারী হা/৩৬১৫, মুসলিম হা/২০০৯, মিশকাত হা/৫৮৬৯, ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায়; ‘মু’জিযা’ অনুচ্ছেদ]
শিক্ষা:
- সর্বক্ষেত্রে যথাযথভাবে নেতার আনুগত্য করা। প্রয়োজনে জীবন দিতে প্রস্তুত থাকা।
- বিশেষ ক্ষেত্রে মহৎ ব্যক্তিগণকে ঘুম থেকে না ডাকা বিচক্ষণতার পরিচয়।
- যে কোন বিপদে একমাত্র মহান আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা রাখা।
- আল্লাহ তা’আলা শত্রু বা যালেমদেরকে অনেক সময় প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করে থাকেন।
তিলাওয়াতের সুন্নাত সমূহ ও নিয়মাবলী
তিলাওয়াতের সুন্নাত সমূহ ও নিয়মাবলী-
- তিলাওয়াত শুরু করার সময় ‘আউযু বিল্লাহ’ পড়া সুন্নাত।
- সূরাগুলাের শুরুতে “বিসমিল্লাহ পড়া সুন্নাত, অন্যথায় মুস্তাহাব। আর যদি যে আয়াত পড়তে চায় সেটার শুরুতে মহান মুনিব (আল্লাহ্ তা’আলা)-এর দিকে মন নিবদ্ধ হয়, তবে এমতাবস্থায় ‘আউযু বিল্লাহ -এর সাথে ‘বিসমিল্লাহ পড়া মুস্তহাব ।
- কোরআন মজীদ উচ্চ স্বরে পাঠ করা উত্তম, যখন কোন নামাযী কিংবা ঘুমন্ত ব্যক্তির কষ্ট না হয়। (গুনিয়াহ)
কুরআন তেলাও্যাতের সময় নিম্নোক্ত বিষয়ে মনোযোগী হবেন-
- খুবই আগ্রহ ও মনযােগ সহকারে কোরআন মজীদ তেলাওয়াত করবেন।
- একাগ্রচিত্তে কোরআন মজীদ তিলাওয়াত করবেন। আর তাতে কখনাে অবহেলা ও অমনযােগীতা প্রদর্শন করবেন না।
- তিলাওয়াতের পূর্বে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার প্রতি পুরােপুরিভাবে গুরুত্ব দেবেন।
- তিলাওয়াতের সময় বাহ্যিক পবিত্রতার সাথে সাথে অন্তরকেও নাপাক ধ্যান-ধারণাদি, মন্দ আবেগ ও কু-উদ্দেশ্যাবলী থেকে পবিত্র রাখবেন।
- সর্বদা পাক-সাফ স্থানে বসে কালামে পাকের তিলাওয়াত করবেন।
- কোরআন মজীদের মহত্বের সাথে সাথে আল্লাহ্ তা’আলার মহত্বও অন্তরে বদ্ধমূল করুন! আর এ নিশ্চিত বিশ্বাস রাখুন যে, যা আপনি পাঠ করছেন তা কোন মানুষের বাণী নয়।
- যদি কারাে জন্য কষ্টকর না হয়, তবে উচ্চ রবে কালামে পাক তিলাওয়াত করবেন।
- মানুষকে নিজের ভক্ত ও আসক্ত বানানাে, নিজের সুললিত কণ্ঠের প্রতি আস্থা জমানাে এবং নিজের ধার্মিকতার প্রতি বিশ্বাস যােগানাের উদ্দেশ্যে তিলাওয়াত করা থেকে বিরত থাকুন!
- সাহরী ও তাহাজ্জুদের সময় কোরআন মজীদ তিলাওয়াত করার জন্য খুব বেশী চেষ্টা করবেন। বিশেষ গুরুত্ব সহকারে এ সময়গুলােতে তিলাওয়াত করবেন।
বিচার ফয়সালার ক্ষেত্রে ঘুষ গ্রহণ করা
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَ لَا تَاۡکُلُوۡۤا اَمۡوَالَکُمۡ بَیۡنَکُمۡ بِالۡبَاطِلِ وَ تُدۡلُوۡا بِهَاۤ اِلَی الۡحُکَّامِ لِتَاۡکُلُوۡا فَرِیۡقًا مِّنۡ اَمۡوَالِ النَّاسِ بِالۡاِثۡمِ وَ اَنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۱۸۸﴾
“তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না এবং জনগণের সম্পদের কিয়দাংশ জেনে-শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারকগণের কাছে পেশ করো না।” [সূরা আল-বাকারাহ আয়াত: ১৮৮]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لعنة الله على الراشي والمرتشي».
“আল্লাহ তা’আলা ঘুষ দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের উপর অভিশাপ করেছেন।” (আহমদ।)
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من شفع لأخيه شفاعة فأهدى له هدية فقبلها منه فقد أتى بابا عظيما من أبواب الربا».
“যদি কোনো ব্যক্তি তার ভাইয়ের জন্য কোনো বিষয় সুপারিশ করে, পরে তার জন্য হাদিয়া বা উপটোকন প্রেরণ করা হয়, সে তা গ্রহণ করে। তাহলে উক্ত ব্যক্তি এক মারাত্মক ধরনের সুদের দ্বারে প্রবেশ করল।”( আহমদ, হাদীস নং ৬৬৮৯।)