সুদ
اَلَّذِیۡنَ یَاۡکُلُوۡنَ الرِّبٰوا لَا یَقُوۡمُوۡنَ اِلَّا کَمَا یَقُوۡمُ الَّذِیۡ یَتَخَبَّطُهُ الشَّیۡطٰنُ مِنَ الۡمَسِّ ؕ ذٰلِکَ بِاَنَّهُمۡ قَالُوۡۤا اِنَّمَا الۡبَیۡعُ مِثۡلُ الرِّبٰوا ۘ وَ اَحَلَّ اللّٰهُ الۡبَیۡعَ وَ حَرَّمَ الرِّبٰوا ؕ فَمَنۡ جَآءَهٗ مَوۡعِظَۃٌ مِّنۡ رَّبِّهٖ فَانۡتَهٰی فَلَهٗ مَا سَلَفَ ؕ وَ اَمۡرُهٗۤ اِلَی اللّٰهِ ؕ وَ مَنۡ عَادَ فَاُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ ﴿۲۷۵﴾
কিন্তু যারা সুদ খায় তাদের অবস্থা হয় ঠিক সেই লোকটির মতো যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল করে দিয়েছে। তাদের এই অবস্থায় উপনীত হবার কারণ হচ্ছে এই যে, তারা বলে “ব্যবসা তো সুদেরই মতো।” অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করে দিয়েছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম। কাজেই যে ব্যক্তির কাছে তার রবের পক্ষ থেকে এই নসীহত পৌঁছে যায় এবং ভবিষ্যতে সুদখোরী থেকে সে বিরত হয়, সে ক্ষেত্রে যা কিছু সে খেয়েছে তাতো খেয়ে ফেলেছেই এবং এ ব্যাপারটি আল্লাহর কাছে সোপর্দ হয়ে গেছে। আর এই নির্দেশের পরও যে ব্যক্তি আবার এই কাজ করে, সে জাহান্নামের অধিবাসী। সেখানে সে থাকবে চিরকাল। (সূরা বাকারা-২৭৫)
یَمۡحَقُ اللّٰهُ الرِّبٰوا وَ یُرۡبِی الصَّدَقٰتِ ؕ وَ اللّٰهُ لَا یُحِبُّ کُلَّ کَفَّارٍ اَثِیۡمٍ ﴿۲۷۶﴾
আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত ও বিকশিত করেন। আর আল্লাহ অকৃতজ্ঞ দুষ্কৃতকারীকে পছন্দ করেন না। (সূরা বাকারা-২৭৬)
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَ ذَرُوۡا مَا بَقِیَ مِنَ الرِّبٰۤوا اِنۡ کُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ ﴿۲۷۸﴾
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং লোকদের কাছে তোমাদের যে সুদ বাকি রয়ে গেছে তা ছেড়ে দাও, যদি যথার্থই তোমরা ঈমান এনে থাকো। (সূরা বাকারা-২৭৮)
فَاِنۡ لَّمۡ تَفۡعَلُوۡا فَاۡذَنُوۡا بِحَرۡبٍ مِّنَ اللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ ۚ وَ اِنۡ تُبۡتُمۡ فَلَکُمۡ رُءُوۡسُ اَمۡوَالِکُمۡ ۚ لَا تَظۡلِمُوۡنَ وَ لَا تُظۡلَمُوۡنَ ﴿۲۷۹﴾
কিন্তু যদি তোমরা এমনটি না করো তাহলে জেনে রাখো, এটা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা। এখনো তাওবা করে নাও (এবং সুদ ছেড়ে দাও) তাহলে তোমরা আসল মূলধনের অধিকারী হবে। তোমরা জুলুম করবে না এবং তোমাদের ওপর জুলুম করাও হবে না। (সুরা বাকারা ২৭৯)
রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াসের দরবারে আৰু সুফিয়ান
সপ্তম হিজরী, ৬২১ খৃষ্টাব্দ। মক্কার কাফেরদের কুরাইশদের সাথে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর হুদায়বিয়ার সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়েছে। যে ইসলামের নাম শুনলে জ্বলে উঠত কুরাইশদের গা, আজ সেই কুরাইশগণ স্পষ্টতঃ স্বীকৃতি দিল ইসলামকে একটি শক্তিশালী ধর্ম হিসাবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নদীর মোহনায় এসে তাঁর সাধনার স্রোতধারায় শুনতে পেলেন মহাসাগরের কল্লোল। তাই তিনি মনস্থ করলেন বিশ্বের শক্তিশালী রাজা-বাদশাহদের নিকট ইসলামের সুমহান বার্তা পৌঁছাতে।
তৎকালীন বিশ্বের বুকে রোম ও পারস্য ছিল সবচেয়ে ক্ষমতাধর শক্তিশালী সাম্রাজ্য। রোমান সাম্রাজ্যের শাসনকর্তা ছিলেন সম্রাট হিরাক্লিয়াস। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রখ্যাত ছাহাবী দেহিয়া কালবী (রাঃ)-কে ইসলামের দাওয়াতপত্র তাঁর কাছে প্রেরণ করেন। সম্রাট হিরাক্লিয়াস ঐ সময় জেরুজালেমে অবস্থান করছিলেন। এদিকে কুরাইশ নেতা আবূ সুফিয়ান (তখনও তিনি মুসলমান হননি) ব্যবসা উপলক্ষে সিরিয়াতে অবস্থান করছিলেন।
আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তাঁকে আবূ সুফিয়ান বিন হারব সংবাদ দিয়েছেন যে, একদা রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস তাঁকে একদল কুরাইশ সহ ডেকে পাঠালেন। তখন তাঁরা ব্যবসা উপলক্ষে সিরিয়াতে অবস্থান করছিলেন। এ সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আবূ সুফিয়ান ও কুরাইশদের সাথে হুদায়বিয়ার সন্ধিসূত্রে আবদ্ধ ছিলেন। সম্রাট হিরাক্লিয়াস তাঁর অমাত্যবর্গ পরিবৃত অবস্থায় ঈলিয়া বা জেরুজালেমে অবস্থানকালে তাঁরা সম্রাটের দরবারে আগমন করলেন। সম্রাট হিরাক্লিয়াস তাঁদেরকে স্বীয় মজলিসে ডেকে নিলেন। তখন তাঁর চতুষ্পার্শ্বে ছিলেন রোমান প্রধানগণ। অতঃপর তিনি কুরাইশগণকে এবং তাঁর দোভাষীকে আহ্বান জানিয়ে বললেন, যে লোকটি তোমাদের মধ্যে নবী বলে দাবী করছেন বংশগতভাকে তোমাদের মধ্যে কে তাঁর অধিক নিকটবর্তী? আবূ সুফিয়ান বললেন, তখন আমি বললাম, “বংশগতভাবে আমিই তাঁর নিকটতম ব্যক্তি’। সম্রাট হিরাক্লিয়াস নির্দেশ দিলেন যে, তাঁকে আমার নিকটবর্তী করো এবং তাঁর সঙ্গী- সাথীগণকেও ডেকে এনে তাঁর পেছনে উপস্থিত কর। অতঃপর সম্রাট তাঁর দোভাষীকে বললেন, তুমি তাদেরকে বল, আমি এই লোকটিকে তাঁর [(রাসূল (ছাঃ)] সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করব। যদি সে আমার সাথে কোন মিথ্যা কথা বলে, তবে তোমরা যেন তাদে- মিথ্যাবাদী বলে প্রমাণ করো। আবু সুফিয়ান বলেন, “আল্লাহর কসম!” লোকেরা আমার উপর মিথ্যা আরোপ করবে বলে যদি আমার লজ্জার ভয় না হ’ত, তাহ’লে তখন আমি অবশ্যই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলতাম’ সম্রাট সর্বপ্রথম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, যিনি নবী বলে দাবী করছেন তাঁর বংশ কেমন?
আবূ সুফিয়ান : তিনি আমাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত বংশগত।
সম্রাট : তাঁর পূর্বে তোমাদের মধ্য হতে কোন ব্যক্তি কখনও এমন কথা বলেছে কি?
আবূ সুফিয়ান : না।
সম্রাট : তাঁর পিতৃপুরুষগণের মধ্যে কেউ বাদশাহ ছিলেন কি?
আবূ সুফিয়ান : না ।
সম্রাট : প্রভাবশালী লোকেরা তাঁর অনুসরণ করছে, না দুর্বল লোকেরা?
আবূ সুফিয়ান : দরিদ্র ও দুর্বল শ্রেণীর লোকগুলো।
সম্রাট : তাদের সংখ্যা কি দিন দিন বাড়ছে, না কমছে?
আবূ সুফিয়ান : না, বরং বাড়ছে।
সম্রাট : তাদের মধ্যে কেউ কি সেই দ্বীনে প্রবেশ করার পর তাঁর দ্বীনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে তা ত্যাগ করে থাকে?
আবূ সুফিয়ান : না ।
সম্রাট : সে নবুঅত লাভের পূর্বে কি তোমরা তাঁকে মিথ্যাবাদী বলে অপবাদ দিতে?
আবূ সুফিয়ান : না ।
সম্রাট : তিনি কখনো কোন অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছেন কি?
আবূ সুফিয়ান : না। তবে আমরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাঁর সাথে এক সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছি, জানি না এ সময়ের মধ্যে তিনি কী করবেন।
আবূ সুফিয়ান (পরবর্তীতে) বলেন, এই কথাটি ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে অন্য কিছু বলা আমার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
সম্রাট : তোমরা কি তাঁর সাথে কোন যুদ্ধ করেছ?
আবূ সুফিয়ান : হ্যাঁ ।
সম্রাট : যুদ্ধের ফলাফল কি?
আবূ সুফিয়ান : তাঁর ও আমাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত যুদ্ধের ফলাফল হ’ল বালতিতে পালাক্রমে পানি তোলার ন্যায়। অর্থাৎ কোনটায় তিনি জয় লাভ করেন এবং কোনটায় আমরা।
সম্রাট : তিনি তোমাদেরকে কি নির্দেশ দিয়ে থাকেন?
আবূ সুফিয়ান : তিনি বলেন, তোমরা একমাত্র আল্লাহ্র ইবাদত কর। তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক কর না। আর তোমরা তোমাদের বাপ-দাদারা যা বলে বেড়াত, তা পরিত্যাগ কর। তিনি আমাদেরকে ছালাত প্রতিষ্ঠা করতে, সর্বদা সত্য কথা বলতে, অশ্লীল ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকতে এবং আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখতে বলেন।
সম্রাট হিরাক্লিয়াস দোভাষীকে বললেন, তুমি তাকে বল, আমি তোমাকে তাঁর বংশ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি। তুমি উত্তরে বলেছ, তিনি তোমাদের মধ্যে সম্ভান্ত বংশজাত। প্রকৃতপক্ষে নবী-রাসূলগণ তাদের কওমের সম্ভ্রান্ত পরিবারে প্রেরিত হয়ে থাকেন। আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি, তোমাদের মধ্যে কেউ কি এ কথা (নবী হওয়ার কথা) বলেছেন? তুমি উত্তরে বলেছ, না। আমি বলতে চাই- যদি তাঁর পূর্বে কেউ এ কথা বলত, তবে অবশ্যই আমি বলতে পারতাম, তিনি এমন এক ব্যক্তি, যিনি পূর্বের কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন। আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি, তাঁর পিতৃপুরুষগণের মধ্যে কোন বাদশাহ ছিলেন কি? তুমি উত্তরে বলেছ, না। আমি বলতে চাই- যদি তাঁর পিতৃপুরুষগণের মধ্যে কোন বাদশাহ থাকতে, তাহ’লে আমি বলতাম, তিনি এমন এক ব্যক্তি, যিনি পিতৃরাজ্য পুনরুদ্ধার করতে ইচ্ছুক। আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি, তোমরা তাঁর নবুঅত লাভের পূর্বে তাঁর প্রতি কোন মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিলে কি? তুমি উত্তরে বলেছ, না। কাজেই আমি বুঝতেছি, তিনি এমন ব্যক্তি নন, যিনি মানুষের ব্যাপারে মিথ্যারোপ করবেন এবং আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করবেন। আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি যে, প্রভাবশালী লোকেরা তাঁর অনুসরণ করছে, না নিরীহ-দুর্বল লোকগুলো? তুমি উত্তরে বলেছ, নিরীহ-দুর্বল লোকেরাই তাঁর অনুসরণ করছে। আসলে নিরীহ-দুর্বল লোকেরাই নবী-রাসূলগণের অনুসারী হয়ে থাকে। আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি, তারা সংখ্যায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হচ্ছে, না হ্রাস পাচ্ছে? তুমি উত্তরে বলেছ, বৃদ্ধি হচ্ছে। ঈমানের ব্যাপারটি পূর্ণতা লাভের সময় পর্যন্ত এরূপই হয়ে থাকে। আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি, কেউ তাঁর দ্বীনে প্রবেশ করে বীতশ্রদ্ধ হয়ে আবার সে দ্বীন পরিত্যাগ করেছে কি? তুমি উত্তরে বলেছ, না। আসলে ঈমানের দীপ্তি ও সজীবতা অন্তরের সাথে মিশে গেলে এরূপই হয়ে থাকে। আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি, তিনি কোন প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন কি? তুমি উত্তরে বলেছ, না । নবী-রাসূলগণ এরূপই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না। আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি, তিনি তোমাদেরকে কি নির্দেশ প্রদান করেন? তুমি উত্তরে বলেছ, তিনি তোমাদেরকে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করার ও তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক না করার নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি তোমাদেরকে মূর্তিপূজা করতে নিষেধ করেন এবং তোমাদেরকে ছালাত প্রতিষ্ঠা করার, সত্য কথা বলার ও পূত-পবিত্র থাকার নির্দেশ প্রদান করেন। তুমি যা বলেছ তা যদি সত্য হয়, তবে তিনি অত্যল্পকালের মধ্যেই আমার এ পদদ্বয়ের নিম্নবর্তী স্থানের (সিরিয়ার) মালিক হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করবেন। আমি নিশ্চিত জানতাম, তাঁর আবির্ভাব হবে; কিন্তু তিনি যে তোমাদের মধ্য হ’তে হবেন, একথা ভাবতে পারিনি। আমি যদি যথাযথভাবে তাঁর নিকট পৌঁছতে পারব বলে জানতে পারতাম, তাহ’লে আমি তার সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে সম্ভাব্য সর্ব প্রকার কষ্ট স্বীকার করতাম। আর আমি যদি তাঁর নিকট থাকতাম, তাহ’লে ৷ অবশ্যই আমি তাঁর পা ধুয়ে দিতাম।
অতঃপর সম্রাট হিরাক্লিয়াস রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পত্রখানা আনতে বললেন, যে পত্রখানা দিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছাহাবী দেহিয়া কালবী (রাঃ)-কে বছরার শাসনকর্তার নিকট পাঠিয়েছিলেন। বছরার অধিপতি হারেছ পত্রখানা সম্রাট হিরাক্লিয়াসকে প্রদান করলে তিনি তা পাঠ করলেন। পত্রটি ছিল নিম্নরূপ-
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্র নামে শুরু করছি। আল্লাহ্র বান্দা ও তদীয় রাসুল মুহাম্মাদের পক্ষ হ’তে রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের প্রতি। যারা সঠিক পথের অনুসারী, তাদের উপর শান্তি বর্ধিত হৌক। অতঃপর, আমি আপনাকে ইসলামের দাওয়াত প্রদান করছি। ইসলাম গ্রহণ করুন, নিরাপদে থাকতে পারবেন। আল্লাহ আপনাকে দ্বিগুণ পুরস্কারে ভূষিত করবেন। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেন, তাহ’লে সকল প্রজার পাপ আপনার উপর বর্তাবে। ‘হে আহলে কিতাব! ‘তোমরা একটি কথার দিকে চলে আস, যে কথাটি আমাদের ও তোমাদের মধ্যে অভিন্ন, আমরা যেন আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত না করি, তাঁর সাথে অন্য কোন কিছুকে শরীক না করি এবং আমাদের কেউ যেন আল্লাহ ছাড়া অপর কাউকে প্রভু হিসাবে গ্রহণ না করি। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তাদের বলে দাও, তোমরা সাক্ষী থাক যে, আমরা মুসলিম’ (আলে ইমরান ৬৪)।
আবু সুফিয়ান বলেন, যখন সম্রাট হিরাক্লিয়াস তাঁর বক্তব্য ও পত্রখানা পাঠ শেষ করলেন, তখন তাঁর সম্মুখে শোরগোল ও চীৎকার চরম আকার ধারণ করল এবং আমাদেরকে বের করে দেয়া হ’ল। তখন আমি আমার সঙ্গী- সাথীদেরকে বললাম, আবূ কাবশার (মুহাম্মাদ) ছেলের বিষয় তো শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, বনু আছফার (রোম)-এর বাদশাহও তাকে ভয় পাচ্ছে। তখন থেকে আমি বিশ্বাস করতাম যে, তিনি শীঘ্রই জয়ী হবেন। অবশেষে মহান আল্লাহ আমাকে ইসলাম গ্রহণের তাওফীক দিলেন । (ছহীহ বুখারী হা/৭, ‘অহির সূচনা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৬, মুসলিম হা/১৭৭৩, মিশকাত হা/৫৮৬১)
শিক্ষা :
- গরীব-অসহায়রাই দ্বীনী কাজে অগ্রগামী থাকে।
- আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রত্যেক মানুষকে সত্য-মিথ্যা ও ভাল-মন্দ বুঝার অনুধাবন শক্তি দিয়েছেন।
- ক্ষমতালিপ্সা ও স্বার্থহানির ভয়ে মানুষ হক গ্রহণ থেকে বিরত থাকে । I
দাড়ি রাখার সুন্নাত
- দাড়ি সব নবীর সুন্নত : ইবনে আব্বাস (রা.) একটি সহিহ সনদে ব্যাখ্যা করেন, আল্লাহ তাআলা যেসব ‘কালিমাত’ দ্বারা ইবরাহিম আ. এর পরীক্ষা নিয়েছিলেন, সেগুলো ছিল ফিতরার স্বাভাবিক গুণাবলি। দাড়ি ছিল সেগুলোর অন্যতম। আর ইবরাহিম (আ.) সব পরীক্ষায়ই সফলতা লাভ করেছেন। কোরআন মাজিদের বর্ণনা থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান যে নবী হারুন (আ.)-এর দাড়ি ছিল দীর্ঘ। পবিত্র কোরআনে মুসা ও হারুন (আ.)-এর কথোপকথনের উল্লেখ এভাবে এসেছে, ‘সে (হারুন) বলল, হে আমার জননী তনয়, আমার দাড়ি ও মাথার চুল ধরো না।’ (সুরা ত্বহা, আয়াত : ৯৪)
- পৌরুষত্বের লক্ষণ : আল্লাহ নারী-পুরুষকে সুন্দরতম আকৃতি দান করেছেন এবং উভয়ের মধ্যে সৌন্দর্যের উপকরণ স্থাপন করেছেন। পুরুষের দাড়ি যেমন পুরুষত্বের পরিচয় বহন করে, তেমনি তা মুখের সৌন্দর্য বর্ধন করে।
- সৌন্দর্য ও সম্মানের প্রতীক : আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানদের সম্মানিত করেছি।’ (ইসরা, হাদিস : ৭০)
- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা গোঁফ অধিক ছোট করবে এবং দাড়ি ছেড়ে দেবে।’
- হাদিসের অন্য বর্ণনায় এসেছে- হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের গোঁফ খাটো করতে এবং দাড়ি লম্বা করতে আদেশ করেছেন।’
তবে এক মুঠো পরিমাণ দাড়ি লম্বা রাখার ব্যাপারে অনেকে সমর্থন করলেও এ পরিমাণের ব্যাপারে হাদিস থেকে সরাসরি কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। তবে হজরত আবু হুরায়রা এমনটি করতেন মর্মে মুসান্নেফে ইবনে আবি শায়বার একটি হাদিসে তা উল্লেখ রয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা(রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেক বর্ণিত আছে যে, তিনি দাড়ি হাতের মুঠোয় নিয়ে এর অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন।’ (ইবনে আবি শায়বা; ৮ম খন্ড)
মানুষের নিকট অন্যের গোপন তথ্য ফাঁস করা
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَّ لَا تَجَسَّسُوۡا ﴿۱۲﴾
“তোমরা মানুষের ত্রুটি বিচ্যুতি খুজে বেড়াবে না ।” [সূরা আল-হুজরাত, আয়াত: ১২]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
من استمع الى حديث قوم وهم له كارهون أو يفرون القيامة ومن صور صورة يوم أذنه الانك منه« صب في عذب وكلف ان ينفخ فيها وليس بنافخ ومن تحلم يحلم يره كلف ان يعقد بين شعيرتين ولن يفعل».
“যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের লোকের কথা শ্রবণ করার চেষ্টা করে তাদের অনচ্ছিা সত্ত্বেও, তাহলে কিয়ামতের দিন তার কানে গলিত শীশা ঢালা হবে, আর যে ব্যক্তি কোনো জীবজন্তুর ছবি অংকন করে তাকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে। তাকে বলা হবে তুমি এ ছবিতে প্রাণ সঞ্চার কর, কিন্তু সে পারবে না। আর যে ব্যক্তি এমন স্বপ্ন বর্ণনা করল যা সে দেখে নি তাকে শাস্তি হিসেবে দু’টি যবের দানাকে একত্রে জোড়া লাগাতে বলা হবে, কিন্তু তা সে মোটেই পারবে না।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৫২০।)