মিথ্যার পরিণাম
اِنَّمَا یَفۡتَرِی الۡکَذِبَ الَّذِیۡنَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ بِاٰیٰتِ اللّٰهِ ۚ وَ اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡکٰذِبُوۡنَ ﴿۱۰۵﴾
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মিথ্যা তো তারাই বানায় যারা আল্লাহর নিদর্শন সমূহের ওপর ঈমান রাখে না। বস্তুত তারাই মিথ্যুক।’ (সূরা নাহল : ১০৫)
وَ لَا تَقُوۡلُوۡا لِمَا تَصِفُ اَلۡسِنَتُکُمُ الۡکَذِبَ هٰذَا حَلٰلٌ وَّ هٰذَا حَرَامٌ لِّتَفۡتَرُوۡا عَلَی اللّٰهِ الۡکَذِبَ ؕ اِنَّ الَّذِیۡنَ یَفۡتَرُوۡنَ عَلَی اللّٰهِ الۡکَذِبَ لَا یُفۡلِحُوۡنَ ﴿۱۱۶﴾ؕ
আর তোমাদের জিহ্বা দ্বারা বানানো মিথ্যার ওপর নির্ভর করে বলো না যে, এটা হালাল এবং এটা হারাম, আল্লাহর ওপর মিথ্যা রটানোর জন্য। নিশ্চয় যারা আল্লাহর নামে মিথ্যা রটায়, তারা সফল হবে না।।’ (সূরা নাহল : ১১৬)
فَاَعۡقَبَهُمۡ نِفَاقًا فِیۡ قُلُوۡبِهِمۡ اِلٰی یَوۡمِ یَلۡقَوۡنَهٗ بِمَاۤ اَخۡلَفُوا اللّٰهَ مَا وَعَدُوۡهُ وَ بِمَا کَانُوۡا یَکۡذِبُوۡنَ ﴿۷۷﴾
সুতরাং পরিণামে তিনি তাদের অন্তরে নিফাক রেখে দিলেন সেদিন পর্যন্ত, যেদিন তারা তার সাথে সাক্ষাৎ করবে, তারা আল্লাহকে যে ওয়াদা দিয়েছে তা ভঙ্গ করার কারণে এবং তারা যে মিথ্যা বলেছিল তার কারণে।’ (সুরা তওবা : ৭৭)
আবু বকর (রাঃ)-এর মর্যাদা
আবূদ্দারদা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (দ)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় আবূ বকর (রাঃ) পরনের কাপড়ের একপাশ এমনভাবে ধরে আসলেন যে, তার দু’হাঁটু বেরিয়ে পড়ছিল। নবী (দ) বললেন, তোমাদের এ সাথী এই মাত্র কারো সঙ্গে ঝগড়া করে আসছে। তিনি সালাম করলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার এবং ওমর ইবনুল খাত্ত্বাবের মাঝে একটি বিষয়ে কিছু কথা কাটাকাটি হয়ে গেছে। আমিই প্রথমে কটু কথা বলেছি। অতঃপর লজ্জিত হয়ে তার কাছে মাফ চেয়েছি। কিন্তু তিনি আমাকে মাফ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এখন আমি আপনার নিকট হাযির হয়েছি। নবী (দ) বললেন, আল্লাহ্ তোমাকে মাফ করবেন, হে আবূ বকর! এ কথাটি তিনি তিনবার বললেন। অতঃপর ওমর (রাঃ) লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে আবূ বকর (রাঃ)-এর বাড়িতে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আবূ বকর কি বাড়িতে আছেন? তারা বলল, না। তখন ওমর (রাঃ) নবী (দ)-এর নিকট চলে এসে সালাম দিলেন। (তাকে দেখে) নবী (দ)-এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। আবূ বকর (রাঃ) ভীত হয়ে নতজানু হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমিই প্রথমে অন্যায় করেছি । এ কথাটি তিনি দু’বার বললেন । তখন নবী (দ) বললেন, আল্লাহ্ যখন আমাকে তোমাদের নিকট রাসূলরূপে প্রেরণ করেছেন তখন তোমরা সবাই বলেছ, তুমি মিথ্যা বলছ আর আবূ বকর বলেছে, আপনি সত্য বলেছেন। তাঁর জান-মাল সবকিছু দিয়ে আমাকে সহানুভূতি জানিয়েছে। তোমরা কি আমার সম্মানে আমার সাথীকে অব্যাহতি দিবে? এ কথাটি তিনি দু’বার বললেন। অতঃপর আবূ বকর (রাঃ)-কে আর কখনও কষ্ট দেয়া হয়নি ।
[বুখারী হা/৩৬৬১ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছাহাবীদের ফযীলত অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫]
শিক্ষা :
- ক্ষমা মহত্ত্বের লক্ষণ।
- রাসূলুল্লাহ (দ)-এর প্রতি আবূ বকর (রাঃ)-এর ভালবাসা ও সাহায্য- সহানুভূতি ছিল প্রবাদতুল্য। এজন্যই রাসূলুল্লাহ (দ) বলেছিলেন, আমি যদি আমার রব ব্যতীত অন্য কাউকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করতাম তাহলে আবূ বকরকে গ্রহণ করতাম’ । (বুখারী হা/৩৬৫৭)
ক্বদরের দিনের সুন্নাতসমূহ
পুরো রমজান জুড়ে অনেক সুন্নাত আমল রয়েছে। ক্বদরের দিনে ও রাতে এসব আমল করলে অধিক সাওয়াব হাশীল করা যায়। ক্বদরের দিনে নিম্নোক্ত আমল করুন।
- লাইলাতুল কদরে যে যে ইবাদাত করা যায় তা হচ্ছে– নফল সালাত আদায় দোয়া
- দিনে ও রাতে অধিক পরিমাণে আল্লাহ তাআলার জিকির করা।
- দিনে ও রাতে পবিত্র কুরআনুল কারিম তেলাওয়াত করা; সম্ভব হলে কুরআনের ভাব ও মর্মার্থ অনুধাবন করা।
- গরীব, দুঃখী ও অসহায়দের মাঝে ইফতার, সাহরি ও বেশি বেশি দান-সাদকা করা।
- বিগত জীবনের গোনাহের কথা স্মরণ করে বেশি বেশি তাওবা ও ইসতেগফার করা।
- আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীসহ সাহায্য প্রার্থণাকারী ও অসুস্থ মানুষের সেবা ও সহযোগিতা করা।
- নিজের গোনাহ মাফের আবেদনের সঙ্গে সঙ্গে মুসলিম উম্মাহর মাগফেরাত কামনায় দোয়া করা।
- কবর জিয়ারত করা
- সর্বোপরি আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-গবেষণা ও গরীবদের অন্নদান ইত্যাদি।
কদরের রাতের সালাত ও দোয়া
ধরণীর বুকে সবচাইতে মহিমান্বিত রাত হচ্ছে লাইলাতুল কদর। কেননা আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এ রাত সম্পর্কে বলেছেন, ‘লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি-শাহর’– অর্থাৎ কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। ‘কদর’ শব্দটি থেকেই এসেছে তাকদীর। কুরআন বলে, এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় (মানুষের ভাগ্য) নির্ধারিত হয়। [সূরা দুখান: ৪]
মাহে রমজান আল্লাহর কাছে সবচাইতে মর্যাদাপূর্ণ মাস। আর এ মাসের সবচাইতে মর্যাদাপূর্ণ রাত হলো কদরের রাত। রমজানে যে কোনো ইবাদতের সাওয়াব ৭০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। একটি নফল ইবাদতের মর্যাদা একটি ফরজের সমান হয়ে যায়। এভাবে মাহে রমজান বান্দার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের সেই মাস যা মূলত ইবাদাতের মওসুম। আর লাইলাতুল কদর হলো সেই ইবাদাতের মওসুমের সর্বোচ্চ মহিমান্বিত ইবাদতের রজনী।
হাজার মাসের চেয়ে উত্তম এই রজনীতে যে ইবাদাত করা হবে তার সাওয়াবও হবে হাজারগুণ। অনেকে বলেন, হাজার মাস হচ্ছে কদরের রাতবিহীন ৮৪ বছরের সমান। অতএব এ রাতের ইবাদত দ্বারা কারো জীবনের ৮৪ বছরের নফল ইবাদত আমলনামায় লিপিবদ্ধ হয়ে যায়।
এ রাতে বেশি বেশি সালাত আদায়ের মাধ্যমে ইবাদত করা উচিত। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি কদরের রাতে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে নামাজে দাঁড়ায় তার আগের সব পাপ মার্জনা করে দেয়া হয়। [বুখারী: ১/১৬, হা. ৩৫]
ইমাম বুখারী তার গ্রন্থে একটি অনুচ্ছেদের নাম দিয়েছেন, ‘লাইলাতুল কদরে সালাত আদায় ঈমানের অন্যতম বিষয়’। এ থেকেই বোঝা যায় কদরের রাতে সালাত আদায়ের গুরুত্ব বেশি। দু’ রাকাত করে নফল সালাত আদায় করা যেতে পারে। আর ফজরের সময় নিকটবর্তী হলে বিতরের নামাজ আদায় করে রাতের সালাতকে বেজোড় সালাতে পরিণত করা রাসূলের সুন্নাত।
সূরা কদরে এ বিষয়টি এসেছে এভাবে– ‘এ রাতে ফেরেশতাগণ ও রূহ (জিবরীল) তাদের পালনকর্তার অনুমতিক্রমে প্রতিটি কাজের নির্দেশ নিয়ে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন। আর ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত এতে বিরাজ করে শান্তি ও নিরাপত্তা।’
কদরের রাতের দোয়া
ইবাদাতের সাথে সাথে জীবনের ভুল-ত্রুটি, পাপরাশি মোচনের মাধ্যমে পরিশুদ্ধ হওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিজের ও আপনজনসহ দুনিয়ার সকল মুসলিমের মাগফেরাত কামনা করা একান্ত জরুরি। সেইসাথে আল্লাহর দরবারে নিজেকে সমর্পণ করে দিয়ে মনের সকল আকুল-আকুতি প্রভুর কাছে পেশ করার অতি মূল্যবান সময় এ রাত।
লাইলাতুল কদরের বিশেষ দোয়া সম্পর্কে হাদিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ বর্ণনা রয়েছে। সেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মা আয়েশাকে কদরের রাতে পড়ার জন্য একটি ছোট্ট অথচ তাৎপর্যময় দোয়া শিখিয়েছেন।
রাসূল সা:-এর স্ত্রী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, একবার আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি লাইলাতুল কদর পেয়ে যাই, তাতে আমি কী (দোয়া) পড়বো?’
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি বলবে–
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি নিশ্চয়ই ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে পছন্দ করেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিযী, মিশকাত)
সুতরাং রমজানের শেষ দশকের প্রতিটি রাতে বেশি বেশি এ দোয়াটি পড়া মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ ছাড়াও আল্লাহ তা‘আলার ক্ষমা লাভে কুরআনুল কারিমে তিনি বান্দার জন্য অনেক দোয়া তুলে ধরেছেন। যা নামাজের সেজদা, তাশাহহুদসহ সব ইবাদত-বন্দেগিতে পড়ার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। সেগুলো হচ্ছে–
. رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ
অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! (আমাকে) ক্ষমা করুন এবং (আমার উপর) রহম করুন; আপনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ রহমকারী।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১১৮)
. رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ
অর্থ : হে আমাদের প্রভু-প্রতিপালক! আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। অতএব আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন ও আমাদের প্রতি রহম করুন। আপনি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়াবান। (সূরা মুমিনুন : আয়াত ১০৯)
. رَبِّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ فَاغْفِرْ لِيْ
অর্থ : (হে আমার) প্রভু! নিশ্চয়ই আমি নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি, অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। (সূরা কাসাস : আয়াত ১৬)
. رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
অর্থ : হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং আপনি আমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ১৬)
. رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
অর্থ : হে আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন, তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো।’ (সূরা আরাফ : আয়াত ২৩)
. رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ
অর্থ : হে আমাদের প্রভু! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন আপনি আমাকে, আমার বাবা-মাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করুন। (সূরা ইবরাহীম : আয়াত ৪১)
. سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيْرُ
অর্থ : আমরা (আপনার বিধান) শুনলাম এবং মেনে নিলাম। হে আমাদের রব! আমাদের ক্ষমা করুন। আপনার দিকেই তো (আমাদের) ফিরে যেতে হবে। (সূরা আল-বাকারাহ : আয়াত ২৮৫)
. رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْإِيْمَانِ
অর্থ : হে আমাদের প্রভু! আমাদের ক্ষমা করুন এবং আমাদের আগে যারা ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, তাদেরকেও ক্ষমা করুন। (সুরা হাশর : আয়াত ১০)
. رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِيْ أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ
অর্থ : হে আমাদের প্রভু! আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিন। আমাদের কাজের মধ্যে যেখানে আপনার সীমালঙ্ঘন হয়েছে, তা মাফ করে দিন। আমাদের কদমকে অবিচল রাখুন এবং অবিশ্বাসীদের মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করুন। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ১৪৭)
. رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ
অর্থ : হে আমাদের প্রভু! আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করুন। আমাদের ভুলগুলো দূর করে দিন এবং সৎকর্মশীল লোকদের সাথে আমাদের শেষ পরিণতি দান করুন। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ১৯৩)
আমাদের উচিত, সেজদায় গিয়ে তাসবিহ পড়ে কিংবা শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ ও দরূদ পড়ার পর নিজেদের গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য কুরআনে বর্ণিত এ দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়া।
এছাড়া রাসূল সা: ক্ষমা প্রার্থনার জন্য আল্লাহর কাছে যেসব দু‘আ করেছেন এবং আমাদেরকে শিখিয়ে গেছেন, তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ একটি দু‘আ রয়েছে, যাকে হাদীসে বলা হয়েছে– ‘সাইয়িদুল ইসতিগফার’ বা ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দু‘আ। সাইয়িদ মানে নেতা বা সরদার। এ দু‘আকে বলা হয়েছে গুনাহমাফির দু‘আসমূহের সরদার। দু‘আটি হলো–
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُك وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
অর্থ : হে আল্লাহ, আপনি আমার প্রতিপালক, আপনি ছাড়া প্রকৃত ইবাদতের যোগ্য কেউ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আর আমি আপনার গোলাম; আমি আপনার হেদায়াতের পথে চলছি এবং সাধ্যমত আপনার সাথে কৃত অঙ্গীকার পালনে সচেষ্ট রয়েছি। আমার কৃত-কর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমাকে যত নেয়ামত দিয়েছেন, সেগুলোর স্বীকৃতি প্রদান করছি। যত অপরাধ করেছি সেগুলোও স্বীকার করে নিচ্ছি। অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। কারণ, আপনি ছাড়া গুনাহ মাফ করার কেউ নেই।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে দিনের বেলা এই দু‘আটি (সাইয়িদুল ইসতিগফার) পাঠ করবে, ওই দিন সন্ধ্যা হওয়ার আগে মৃত্যুবরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে। এবং যে কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে রাতে এ দু‘আ পাঠ করবে, ওই রাতে মৃত্যুবরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে।’ [সহীহুল বুখারী]
আল্লাহ আমাদের কৃত অপরাধের ক্ষমা লাভে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেখানো কদরের রাতের ছোট্ট দোয়াটি বেশি বেশি পড়ার তাওফীক দান করুন। সেইসাথে কুরআনি দোয়াসহ সাইয়েদুল ইসতিগফার দৈনন্দিন চর্চায় অভ্যস্ত হওয়ার তাওফীক দান করুন।
দয়াময় আল্লাহ আমাদের সকলের তথা মুসলিম উম্মাহর ভাগ্যে কদরের রাতের ফজিলত ও বরকত নির্ধারণ করে দিন। আমীন!
গাদ্দারী করা, ওয়াদা পালন না করা
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أربع من كن فيه ان ممنافقا خالصا ومن كانت فيه خصلة منهن كانت فيه خصلة من النقثاق حتى يدعها إذا ائتمن خان وإذا حدث كذب وإذا عاهد غدر واذا خاصم فجر».
“চারটি দোষ যার মথ্যে পাওয়া যাবে সে খাঁটি মুনাফিক হবে। আর যার মধ্যে এর একটি পাওয়া যাবে তার মধ্যে মুনাফিকের একটি চরিত্র পাওয়া গেল। যতক্ষণ পর্যন্ত যে উক্ত অভ্যাস ত্যাগ না করে। যখন আমানত রাখার হয়, সে খেয়ানত করে। আর যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে। যখন প্রতিজ্ঞা করে, তখন গাদ্দারী করে। আর যখন ঝগড়া করে, তখন গালি দেয়।”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩)
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لكل غادر لواء يوم القيامة، يرفع له بقدر غدرةه، ألا ولا غادر أعظم غدرا من أمير عامة».
“প্রত্যেক ওয়াদা ভঙ্গকারীর জন্যে কিয়ামতের দিন একটি নিদর্শন থাকবে। তা হলো তার গাদ্দারীর পরিমাণ অনুযায়ী তাকে উচ্চ করা হবে। তবে জনগণের সাথে প্রতারণাকারী শাসকের চেয়ে বড় গাদ্দার আর কেউ হবে না।”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩২৭২)