মাসআলা: মাসনূন ইতিকাফ যেহেতু শেষ দশ দিন ব্যাপী, তাই প্রথম থেকেই পুরো দশ দিন ইতাকাফ করার নিয়ত করবে। এক সাথে দশ দিনের নিয়ত না করলে সুন্নত ইতিকাফ আদায় হবে না; বরং তা নফলে পরিণত হবে।
মাসআলা: ২০ তারিখ সূর্যাস্তের আগেই ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে পৌঁছে যাওয়া জরুরী।
মাসআলা: মাসনূন ইতিকাফ শুরু করলে তা পূর্ণ করা আবশ্যক। ওযর ব্যতীত তা ভাঙ্গা জায়েয নেই।
মাসআলা: ইতিকাফকারীর জন্য ইতিকাফ অবস্থায় স্ত্রীসহবাস করা হারাম। তেমনি স্ত্রীকে চুমু খাওয়া, আলিঙ্গন করা ইত্যাদি সব কিছুই নাজায়েয।
মাসআলা: মাসনূন ইতিকাফ শুরু করার পর মাঝে দুএক দিন যদি ভঙ্গ হয়ে যায় তাহলে সে দিনগুলোর ইতিকাফ পরে কাযা করে নিতে হবে। অর্থাৎ যে কয়দিনের ইতিকাফ ভঙ্গ হয়েছে সে কয়দিনের জন্য রোযা অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করবে।
মাসআলা: পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ইতিকাফ করা ও করানো উভয়ই নাজায়েয।
মাসআলা: ইতিকাফের দিনগুলোতে তেলাওয়াত, তাসবীহ-তাহলীল ও ইবাদত-বন্দিগীতে কাটানো উত্তম।
মাসআলা: কিছু সময় দীনী মাসায়েলের কিতাবাদী পড়াশোনা করা এবং অন্যকে শোনানো উচিত।
মাসআলা: পুরুষরা শুধু মসজিদে ইতিকাফ করবে। আর মহিলারা তাদের ঘরে নামাযের জায়গায় ইতিকাফ করবে।
মাসআলা: মহিলারা তাদের ইতিকাফের স্থানকে পর্দা দিয়ে ঢেকে দিবে, যেন কোন বেগানা পুরুষ আসলে স্থান পরিবর্তন করতে না হয়।
মাসআলা: অজ্ঞান বা পাগল হয়ে গেলে ইতিকাফ নষ্ট হয় না। তবে তা যদি পরবর্তী দিন বা আরো বেশি সময় পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয় তাহলে প্রথম দিন বাদ দিয়ে যে কয়দিন এ অবস্থায় কাটে সেগুলোর কাযা কারে নিতে হবে।
মাসআলা: ইতিকাফ সহীহ হওয়ার জন্য শরয়ী মসজিদ হওয়া জরুরী। জামে সমজিদ হোক বা পাঞ্জেগানা উভয়টিতেই ইতিকাফ করা যায়।
• ইতিকাফ অবস্থায় যা করা যায়
মাসআলা: অন্যান্য রোযাদারদের মত রাতের বেলায় খাওয়া-দাওয়া বা চা পান করা ইত্যাদি সবকিছুই ইতিকাফকারীর জন্য জায়েয।
মাসআলা: প্রয়োজনীয় দুনিয়াবী কথাবর্তা বলা জায়েয।
মাসআলা: প্রয়োজন মত আরাম করা ও ঘুমানো জায়েয।
মাসআলা: জরুরী চিঠিপত্র লেখা এবং ধর্মীয় বইপত্র লেখা জায়েয।
মাসআলা: মসজিদে ইতিকাফ অবস্থায় শুধু প্রয়োজনীয় বেচাকেনার কথাবর্তা বলা জায়েয। তবে পন্য মসজিদের ভেতর প্রবেশ করানো যাবে না।
মাসআলা: ডাক্তাররা প্রয়োজনবশত ইতিকাফ অবস্থায় বিনা পারিশ্রমিকে চিকিৎসাপত্র লিখতে পারবে।
মাসআলা: মল-মুত্র ত্যাগ, অজু, (ফরয ও নফল) ফরয গোসল ও সুন্নত গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েয।
মাসআলা: খাবার মসজিদের পৌঁছে দেওয়ার কেউ না থাকলে নিজে গিয়ে তা আনতে পারবে।
মাসআলা: মুয়ায্যিন ইতিকাফ করলে এবং আজানের জায়গা মসজিদের বাইরে হলে বাইরে গিয়ে তার জন্য আযান দেওয়া জায়েয।
মাসআলা: পাঞ্জেগানা মসজিদ হলে জুমার নামাযের জন্য জামে মসজিদে যাওয়া জায়েয।
মাসআলা: জুমার শেষে (৪ রাকাত ও ২ রাকাত মোট ৬ রাকাত সুন্নত পড়ে সাথে সাথে) ইতিকাফের স্থানে ফিরে আসবে।
মাসআলা: অজু-ইস্তিঞ্জার জন্য বের হলে যদি কোন জানাযা উপস্থিত থাকে তাহলে পথে বিলম্ব না করে জানাযার নামায পড়ে নেওয়া জায়েয।
মাসআলা: ফরয ও মাসনূন গোসল (যেমন জুমার গোসল) ছাড়া স্বাভাবিক গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হবে না। তবে খুব বেশি প্রয়োজন দেখা দিলে মসজিদের ভেতরে বসে মাথা বের করে দিয়ে মাথায় পানি দিবে। এতেও সমস্যা না কাটলে কোন কোন মুফতীর মতে অজু-ইস্তিঞ্জার জন্য যখন বের হবে তখন নিকটে পানির ব্যবস্থা থাকলে অতিদ্রুত গোসল করে নিবে।
মাসআলা: কুরআন মাজীদ ও দীনী কিতাবের তালীম দেওয়া জায়েয।
মাসআলা: ইতিকাফ অবস্থায় শরীরে তেল লাগানো, খুশবু ব্যবহার করা এবং চুল-দাড়ী আঁচড়ানোর অনুমতি আছে।
মাসআলা: ইতিকাফ অবস্থায় চুপ থাকাকে সওয়াব মনে করে চুপ থাকা অর্থাৎ কোন যিকিরও না করা মাকরূহ তাহরীমী।
মাসআলা: মসজিদ একতলা বিশিষ্ট হোক বা বহুতল বিশিষ্ট, ছাদ মসজিদের অন্তর্ভুক্ত হবে। সুতরাং ইতিকাফকারী ছাদে যেতে পারবে। মসজিদের বারান্দা যদি মসজিদের অন্তর্ভুক্ত হয় (অর্থাৎ নির্মাণের সময় বারান্দাকেও যদি মসজিদের অংশ মনে করা হয়ে থাকে) তাহলে সেখানেও ইতিকাফকারী যেতে পারবে।
মাসআলা: ইতিাকাফকারী নফল অজুর জন্য মসজিদের বাইরে যেতে পারবে।