রাগ
الَّذِیۡنَ یُنۡفِقُوۡنَ فِی السَّرَّآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ الۡکٰظِمِیۡنَ الۡغَیۡظَ وَ الۡعَافِیۡنَ عَنِ النَّاسِ ؕ وَ اللّٰهُ یُحِبُّ الۡمُحۡسِنِیۡنَ ﴿۱۳۴﴾ۚ
যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ সে সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন। (সুরা আলে ইমরান-১৩৪)
هٰۤاَنۡتُمۡ اُولَآءِ تُحِبُّوۡنَهُمۡ وَ لَا یُحِبُّوۡنَکُمۡ وَ تُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡکِتٰبِ کُلِّهٖ ۚ وَ اِذَا لَقُوۡکُمۡ قَالُوۡۤا اٰمَنَّا ۚ٭ۖ وَ اِذَا خَلَوۡا عَضُّوۡا عَلَیۡکُمُ الۡاَنَامِلَ مِنَ الۡغَیۡظِ ؕ قُلۡ مُوۡتُوۡا بِغَیۡظِکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلِیۡمٌۢ بِذَاتِ الصُّدُوۡرِ ﴿۱۱۹﴾
শোন, তোমরাই তো তাদেরকে ভালবাস এবং তারা তোমাদেরকে ভালবাসে না। অথচ তোমরা সব কিতাবের প্রতি ঈমান রাখ। আর যখন তারা তোমাদের সাথে সাক্ষাৎ করে, তখন বলে, “আমরা ঈমান এনেছি’। আর যখন তারা একান্তে মিলিত হয়, তোমাদের উপর রাগে আঙ্গুল কামড়ায়। বল, ‘তোমরা তোমাদের রাগ নিয়ে মর’! নিশ্চয় আল্লাহ অন্তরের গোপন বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত। (সুরা আলে ইমরান-১১৯)
হুমামার প্রতি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর উত্তম আচরণের অনুপম নিদর্শন
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার রাসূল (ছাঃ) নাজদের দিকে কিছু অশ্বারোহী সৈন্য) পাঠালেন। তারা বনী হানীফা গোত্রের জনৈক ব্যক্তিকে ধরে আনল। তার নাম ছুমামাহ বিন উছাল। সে ইয়ামামাবাসীদের সরদার। তারা তাকে মসজিদে নববীর একটি খুঁটির সাথে বেঁধে রাখল। রাসূল (ছাঃ) তার কাছে আসলেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ওহে ছুমামাহ! তুমি কি মনে করছ? সে বলল,
عندِي يَا مُحَمَّدُ غَيْر إِنْ تَقْتُلُ تَقْتُلُ ذَا دَم وَإِنْ تُنْعَمْ تُنْعِمْ عَلَى شَاكِرٍوإن كنت تريدُ الْمَالَ فَسَل لقد منه ما هفت
“হে মুহাম্মাদ! আমার ধারণা ভালই। যদি আপনি আমাকে হত্যা করেন, তাহ’লে অবশ্যই আপনি একজন খুনীকে হত্যা করবেন। আর যদি আপনি অনুগ্রহ করেন, তাহ’লে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপরই অনুগ্রহ করবেন আর যদি আপনি মাল চান, তাহ’লে যা ইচ্ছা চাইতে পারেন, তা আদায় করা হবে’। তার কথা শুনে রাসূল (ছাঃ) তাকে (সেদিনের মত তার নিজের অবস্থার উপর) ছেড়ে দিলেন।
অতঃপর পরের দিন নবী করীম (ছাঃ) তাকে পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, “ওহে ছুমামাহ! তোমার কি মনে হচ্ছে? সে জবাবে বলল, “তাই মনে হচ্ছে, যা আমি আপনাকে পূর্বেই বলেছি। যদি আপনি আমার প্রতি মেহেরবানী করেন, তাহ’লে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপর মেহেরবানী করবেন। আর যদি আপনি হত্যা করেন, তাহলে একজন খুনী লোককে হত্যা করবেন আর যদি মাল-সম্পদ চান, তাহ’লে যা ইচ্ছা চাইতে পারেন, তা দেয়া হবে । রাসূল (ছাঃ) আজও তাকে (নিজের অবস্থার উপর) ছেড়ে দিলেন। এভাবে রাসূল (ছাঃ) তৃতীয় দিনে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ওহে ছুমামাহ! তোমার কি মনে হচ্ছে? জওয়াবে সে বলল, ‘আমার তাই মনে হচ্ছে, যা আমি পূর্বেই আপনাকে বলেছি। যদি আপনি আমার প্রতি অনুকম্পা প্রদর্শন করেন, তাহ’লে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপরই অনুকম্পা করবেন আর যদি আপনি আমাকে হত্যা করেন, তাহ’লে একজন খুনীকে হত্যা করবেন। আর যদি আপনি মাল-সম্পদ চান, তাহ’লে যতটা ইচ্ছা চাইতে পারেন, তা দেয়া হবে।
অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘তোমরা চুমামাহকে ছেড়ে দাও’! (তাকে ছেড়ে দেওয়া হ’ল)। অতঃপর সে মসজিদের নিকটবর্তী একটি খেজুর বাগানে গিয়ে গোসল করল। অতঃপর মসজিদে প্রবেশ করে বলে উঠল ‘আশহাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহ ওয়া রাসূলুহু’। ‘হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ্র কসম! পৃথিবীর বুকে আপনার চেহারা অপেক্ষা আর কারও চেহারা আমার নিকট অধিক ঘৃণ্য ছিল না। কিন্তু এখন আপনার চেহারা আমার কাছে সবচেয়ে বেশী প্রিয় হয়ে গেছে। আল্লাহ্র কসম! (ইতিপূর্বে) আপনার দ্বীন অপেক্ষা অধিক অপ্রিয় দ্বীন আমার কাছে আর কোনটিই ছিল না। কিন্তু এখন আপনার দ্বীনই আমার কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় হয়ে গেছে। আল্লাহ্র কসম! (এর আগে) আপনার শহরের চেয়ে অধিক ঘৃণ্য শহর আর কোনটিই আমার কাছে ছিল না। কিন্তু এখন আপনার শহরটিই আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় হয়ে গেছে। আপনার অশ্বারোহীরা আমাকে এমন অবস্থায় ধরে এনেছে, যখন আমি ওমরাহ করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলাম। এখন আপনি আমাকে কি করতে হুকুম দিচ্ছেন? রাসূল (ছাঃ) তাকে সুসংবাদ শুনালেন এবং ওমরাহ পালনের আদেশ করলেন। এরপর যখন তিনি মক্কায় পৌঁছলেন, তখন জনৈক ব্যক্তি তাকে বলল, তুমি না কি বেদ্বীন হয়ে গেছ? তিনি জওয়াবে বললেন, ‘তা হবে কেন; বরং আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেছি। আর আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অনুমতি ছাড়া তোমাদের কাছে ইয়ামামা হ’তে আর একটি গমের দানাও আসবে না’। (বুখারী হা/৪৬২, মুসলিম হা/১৭৬৪, আলবানী, মিশকাত হা/৩৯৬৪, ‘জিহাদ’ অধ্যায়, ‘যুদ্ধবন্দীদের বিধান’ অনুচ্ছেদ)।
শিক্ষা :
- উত্তম আচরণ ও ক্ষমার মাধ্যমে মানুষের হৃদয় জয় করা যায়। এজন্যই বলা হয়, ক্ষমাই উত্তম প্রতিশোধ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মন্দকে ভাল দ্বারা মোকাবেলা কর, ফলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে, সে অন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত হবে’। (হা-মীম সাজদাহ ৩৪)।
হাত পায়ের নখ কাটার সুন্নাত পদ্ধতি
মুসলমানদের সাপ্তাহিক ঈদ শুক্রবার। সেজন্য পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা স্বাভাবিকভাবে এ দিনেই করে থাকি। হাত-পায়ের নখ কাটাও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার অন্তর্ভুক্ত এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ নখ কাটা যদি সুন্নত তরিকায় হয় তাহলে আমরা ছওয়াব পাব।
আসুন জেনে নিই হাত-পায়ের নখ কাটার সুন্নাত পদ্ধতি-
- সপ্তাহে একবার (হাত পায়ের) নখ কাটা সুন্নাত।
- শুক্রবার জুমার নামাযে যাওয়ার আগে নখ কাটা সুন্নাত। সূত্র: শরহুস্ সুন্নাহ, হাদিস নং ৩০৯০ ও ৩০৯১।
হাতের নখ কাটার পদ্ধতি: উভয় হাত (মুনাজাতের আকৃতিতে ধরে) ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল থেকে আরম্ভ করে ধারাবাহিকভাবে বাম হাতের বৃ্দ্ধাঙ্গুলির নখ কেটে শেষ করা। অতঃপর সর্বশেষে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির নখ কাটা। সূত্র: ফাতওয়ায়ে শামী, ৬: ৪০৬, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, ৫: ৩৫৮।
পায়ের নখ কাটার পদ্ধতি: ডান পায়ের কনিষ্ঠাঙ্গুলি থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে বাম পায়ের কনিষ্ঠাঙ্গুলির নখ কেটে শেষ করা।
দুনিয়া অর্জনের লক্ষ্যে ইলমে দীন শিক্ষা করা এবং সত্যেকে গোপন করা
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
اِنَّ الَّذِیۡنَ یَکۡتُمُوۡنَ مَاۤ اَنۡزَلۡنَا مِنَ الۡبَیِّنٰتِ وَ الۡهُدٰی مِنۡۢ بَعۡدِ مَا بَیَّنّٰهُ لِلنَّاسِ فِی الۡکِتٰبِ ۙ اُولٰٓئِکَ یَلۡعَنُهُمُ اللّٰهُ وَ یَلۡعَنُهُمُ اللّٰعِنُوۡنَ ﴿۱۵۹﴾ۙ اِلَّا الَّذِیۡنَ تَابُوۡا وَ اَصۡلَحُوۡا وَ بَیَّنُوۡا فَاُولٰٓئِکَ اَتُوۡبُ عَلَیۡهِمۡ ۚ وَ اَنَا التَّوَّابُ الرَّحِیۡمُ ﴿۱۶۰﴾
“আমরা যে সব স্পষ্ট নিদর্শন ও পথ-নির্দেশ অবতীর্ণ করেছি মানুষের জন্য কিভাবে তা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করার পরও যারা তা গোপন রাখে আল্লাহ তাদের অভিসম্পাত দেন এবং অভিশাপকারীরাও তাদের অভিশাপ দেয় । কিন্তু যারা তাওবা করে ও নিজেদের সংশোধন করে আর সত্যকে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে। তাদেরই প্রতি আমি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৫৯-১৬০।)
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من تعلم العلم ليباهي به العلماء أو يماري به السفها و أو جهنم” يصرف به وجوه الناس إليه أدخله الله جهنم».
“যে ব্যক্তি জ্ঞানীদের ওপর প্রধান্য বিস্তার করার লক্ষ্যে অথবা মূর্খের সাথে বিতর্কের উদ্দেশ্যে অথবা মানুষের দৃষ্টি তার প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করে আল্লাহ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।” (ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৫৬।)
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
«من تعلم علما مما يبتغي به وجه الله لا ية علمه الا ليصيب به عرضا من الدنيا لم يجد عرف الجنة يوم القيامة».
“যে ব্যক্তি দীনি ইলম শিক্ষা করল ধন সম্পদ লাভের উদ্দেশ্যে, সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।” (আবু দাউদ, হাদীস নং ৩১৭৯।)