অহঙ্কার
اِلٰـهُکُمۡ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ ۚ فَالَّذِیۡنَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡاٰخِرَۃِ قُلُوۡبُهُمۡ مُّنۡکِرَۃٌ وَّ هُمۡ مُّسۡتَکۡبِرُوۡنَ ﴿۲۲﴾
আমাদের ইলাহ একক ইলাহ। অনন্তর যারা পরজীবনে বিশ্বাস করে না, তাদের অন্তর সত্যবিমুখ এবং তারা অহংকার প্রদর্শন করেছে। (সুরা নাহল-২২)
لَاجَرَمَ اَنَّ اللّٰهَ یَعۡلَمُ مَا یُسِرُّوۡنَ وَ مَا یُعۡلِنُوۡنَ ؕ اِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الۡمُسۡتَکۡبِرِیۡنَ ﴿۲۳﴾
নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাদের গোপন ও প্রকাশ্য যাবতীয় বিষয়ে অবগত। নিশ্চিয়ই তিনি অহংকারীদের পছন্দ করেন না। (সুরা নাহল-২৩)
وَ لَا تُصَعِّرۡ خَدَّکَ لِلنَّاسِ وَ لَا تَمۡشِ فِی الۡاَرۡضِ مَرَحًا ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ کُلَّ مُخۡتَالٍ فَخُوۡرٍ ﴿ۚ۱۸﴾
অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। (সুরা লুকমান-১৮)
লোক দেখানো আমলের ভয়াবহ পরিণতি
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, “ক্বিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে ব্যক্তির বিচার করা হবে, সে হবে একজন (ধর্মযুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী) শহীদ। তাকে আল্লাহর নিকট উপস্থিত করা হবে। অতঃপর আল্লাহ পাক তাকে (দুনিয়াতে প্রদত্ত) নে’মতসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। আর সেও তা স্মরণ করবে। এরপর আল্লাহ তা’আলা তাকে জিজ্ঞেস করবেন, দুনিয়াতে তুমি কি আমল করেছ? উত্তরে সে বলবে, আমি তোমার সন্তুষ্টির জন্য (কাফেরদের সাথে লড়াই করেছি। এমনকি শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়েছি। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ, বরং তোমাকে যেন বীর-বাহাদুর বলা হয়, সেজন্য তুমি লড়াই করেছ। আর (তোমার অভিপ্রায় অনুযায়ী) তোমাকে দুনিয়াতে তা বলাও হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে আদেশ দেওয়া হবে। তখন তাকে উপুড় করে টেনে-হিচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
অতঃপর সে ব্যক্তিকে বিচারের জন্য উপস্থিত করা হবে, যে নিজে ধী ইলম শিক্ষা করেছে এবং অপরকে শিক্ষা দিয়েছে। আর পবিত্র কুরআন অধ্যয়ন করেছে (এবং অপরকে শিক্ষা দিয়েছে)। তাকে আল্লাহ পাকের দরবারে হাযির করা হবে। অতঃপর তিনি তাকে নে’মতসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন এবং সেও তা স্মরণ করবে। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাকে জিজ্ঞেস করবেন, এই সমস্ত নে’মতের শুকরিয়া জাপনের জন্য তুমি কি আমল করেছ? উত্তরে সে বলবে, আমি স্বয়ং দ্বীনী ইলম শিক্ষা করেছি। এবং অপরকে শিক্ষা দিয়েছি এবং তোমার সন্তুষ্টির নিমিত্তে কুরআন তেলাওয়াত করেছি। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। আমার সন্তুষ্টির জন্য নয়, বরং তুমি এজন্য ইলম শিক্ষা করেছ, যেন তোমাকে “বিধান’ বলা হয় এবং এজন্য কুরআন অধ্যয়ন করেছ, যাতে তোমাকে ‘কারী’ বলা হয়। আর (তোমার অভিপ্রায় অনুযায়ী) তোমাকে বিশ্বান ও কারীও বলা হয়েছে। অতঃপর (ফেরেশতাদেরকে) তার সম্পর্কে নির্দেশ দেওয়া হবে। সুতরাং তাকে উপুড় করে টানতে টানতে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
অতঃপর এমন এক ব্যক্তিকে বিচারের জন্য আল্লাহ্র দরবারে উপস্থিত করা হবে, যাকে আল্লাহ তা’আলা বিপুল ধন-সম্পদ দান করে বিত্তবান করেছিলেন। তাকে আল্লাহ তা’আলা প্রথমে প্রদত্ত নে’মতসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। আর সে তখন সমস্ত নে’মতের কথা অকপটে স্বীকার করবে। অতঃপর তিনি তাকে জিজ্ঞেস করবেন, এই সমস্ত নে’মতের শুকরিয়ায় তুমি কি আমল করেছ? উত্তরে সে বলবে, যে সমস্ত ক্ষেত্রে ধন- সম্পদ ব্যয় করলে তুমি সন্তুষ্ট হবে, তোমার সন্তুষ্টির জন্য সেসব খাতের একটি পথেও ব্যয় করতে ছাড়িনি। আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। আমার সন্তুষ্টির জন্য নয়; বরং তুমি এই উদ্দেশ্যে দান করেছিলে, যাতে তোমাকে বলা হয় যে, সে একজন ‘দানবীর’। সুতরাং (তোমার অভিপ্রায় অনুসারে দুনিয়াতে) তোমাকে ‘দানবীর’ বলা হয়েছে। অতঃপর (ফেরেশতাদেরকে) তার সম্পর্কে নির্দেশ দেওয়া হবে। নির্দেশ মোতাবেক তাকে উপুড় করে টানতে টানতে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে ।
(মুসলিম) হা/১৯০৫ ‘নেতৃত্ব’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪৩, মিশকাত-আলবানী হা/২০৫, ‘ইলম’ অধ্যায়)
শিক্ষা :
- লোক দেখানো আমলের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। কাজেই সর্বদা আমাদের নিয়তকে পরিশুদ্ধ রাখতে হবে এবং প্রতিটি কাজ একমাত্র আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির জন্যই করতে হবে।
মেসওয়াক করা
মেসওয়াক করা সুন্নাত, কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মেসওয়াক হলো মুখের পবিত্রতা ও প্রতিপালকের সন্তুষ্টি।’(বর্ণনায় মুসলিম)
নিম্নোক্ত সময়গুলোয় মেসওয়াক করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ:
- অজু ও নামাজের সময় : কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর না হত তাহলে প্রত্যেক অজুর সময় আমি তাদের মেসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।’(বর্ণনায় মুসলিম)
তিনি আরো বলেছেন,‘যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর না হত তাহলে প্রত্যেক নামাজের সময় আমি তাদের মেসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।’(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)
- ঘরে প্রবেশের সময় : মিকদাম তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘আমি আয়েশা (রা.) কে প্রশ্ন করলাম, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ঘরে প্রবেশ করতেন তখন প্রথম কি কাজ করতেন? তিনি বললেন, ‘মেসওয়াক করতেন।’(বর্ণনায় মুসলিম)
- ঘুম থেকে জাগার পর মেসওয়াক করা : হুযাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন রাতে জাগ্রত হতেন তখন মেসওয়াক দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতেন।’(বর্ণনায় বুখারী)
- আল কুরআন তেলাওয়াতের সময় মেসওয়াক করা : আলী (রা.) থেকে বর্ণিত যে, তিনি মেসওয়াক করতে নির্দেশ দিয়েছেন আর বলেছেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষ যখন মেসওয়াক করে, অতঃপর সালাতে দাঁড়ায় তখন ফেরেশতাগণ তার তেলাওয়াত শোনার জন্য তার পিছনে দাঁড়ায়। তাঁরা তার কাছে চলে আসে। এমনিভাবে তাঁদের মুখ তার মুখের কাছে রাখে। তার মুখ থেকে কুরআনের যা কিছু বের হয় তা ফেরেশতাদের মুখে যায়। অতএব তোমরা আল কুরআনের জন্য নিজেদের মুখ পরিষ্কার করো।’(বর্ণনায় বাযযার)
অভিশাপ করা
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
سباب المسلم فسوق وقتاله كفر».
“মুসলিমদের অভিশাপ করা অন্যায় এবং তাকে হত্যা করা কুফর।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৬।)
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ان العبد اذا لعن شيئ صعدت اللعنة الى السماء فتغلق أبواب السماء دونها ثم تهبط الى الأرض فتغلق أبوابها دونها ثم تأخذ يمينا وشالا فاذا لم تجد مساغا رجعت الى الذي لعن فان كان لذلك أهلا والا رجعت الى قائلها».
“কোনো লোক যখন অন্য কাউকে অভিশাপ করে তথন অভিশাপটি আকাশে উঠতে চেষ্টা করে ৷ কিন্তু তার জন্য আকাশের দরজাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। অতঃপর যমীনের দিকে অবতরণ করে। কিন্তু যমীনের দরজাগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। অহতঃপর অভিশাপটি ডানে বামে ঘুরতে থাকে। কোথাও যাওয়ার সুযোগ না পেয়ে যার উপর করা হলো তার নিকট যায়, যদি সে অভিশাপের উপযুক্ত হয় । অন্যথায় অভিশাপকারীর উপর প্রত্যাবর্তন করে।” (আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬৫৯।)
যে কারণেই হোক কোনো মুসলিম ভইয়ের ওপর অভিশাপ করা সম্পূর্ণ হারাম। খারাপ দোষে দুষ্ট ব্যক্তিদের ওপর তাদের দোষ উল্লেখ করে অভিশাপ করা যায়। যেমন, অত্যাচারীদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ, কাফিরদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ, প্রাণীর ছবি অংকনকারীদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ ইত্যাদি ।