সদকাতুল ফিতর

মাসয়ালা: সদকাতুল ফিতরের নেসাব জাকাতের নেসাবের সমপরিমাণ, অর্থাৎ ঋণ বাদ দিয়ে সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বয়ান্ন ভরি রূপা বা তার সমমূল্যের নগদ অর্থ বা ব্যবহারের অতিরিক্ত জিনিষ-পত্র অথবা খোরপোশের প্রয়োজনাতিরিক্ত জমি ঈদুল ফিতরের দিন তার নিকট থাকলে তার উপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে। তবে এতে জাকাতের ন্যায় বর্ষ অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়। -ফাতহুল কাদির: ২/২৮১, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১৯১, আদ্দুররুল মুখতার: ১/১৪৩

মাসয়ালা: মৌলিক নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিয়ে প্রত্যেকে নেসাব পরিমাণ অর্থ বা সম্পদের মালিক হওয়া সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হওয়ার পূর্বশর্ত। যৌথ সম্পদ বা যৌথ উপার্জন ধর্তব্য নয়। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ১০/৪৯৪, মাবসুতে সারাখসি: ২/১৮৫

মাসয়ালা: নাবালেগ বাচ্চাদের বাবা যদি ওই পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তাহলে পিতার ওপর তাদের পক্ষ থেকেও সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। -বাদায়েউস সানায়ে: ২/৭০

মাসয়ালা: যাদের জাকাত দেওয়া যায় তাদেরকে ফিতরাও দেওয়া যায়। যাদেরকে জাকাত দেওয়া যায় না তাদেরকে ফিতরাও দেওয়া যায় না। নিজের ঊর্ধ্বতন যথা বাবা-মা, দাদা-দাদি, নানা-নানি ও তাদের বরাবর উপরে এবং অধঃস্তন যথা ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি ও তাদের বরাবর নীচে কাউকে ফিতরা দেওয়া যাবে না। স্বামী-স্ত্রী একে-অপরকে দিতে পারবে না। -বাদায়েউস সানায়ে: ২/৪৯, ফাতহুল কাদির: ২/২০৮

মাসয়ালা: ভাই-বোন, চাচা, মামা, ফুফু, খালা ও তাদের সন্তানদেরকে ফিতরা দিতে পারবে। -ফাতহুল কাদির: ২/২০৯, রদ্দুল মুহতার: ২/৩৪২

মাসয়ালা: যার ওপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব নয়- এমন ব্যক্তি ধনী অথবা পিতা-মাতা, ছেলেকে সদকায়ে ফিতরের নামে টাকা দিলে তা শরিয়তের দৃষ্টিতে হাদিয়া বা নফল দান হিসেবে গণ্য হবে, ফিতরা হিসেবে নয়। সুতরাং তাদের জন্য নেওয়া বৈধ হবে। –

মাসয়ালা: সদকায়ে ফিতর ও জাকাত দ্বারা কারো হক আদায় করা যায় না। বেতন যেহেতু চাকুরিজীবির প্রাপ্য তাই ফিতরা দ্বারা বেতন আদায়ের দায়িত্ব থেকে উদ্ধার পাওয়ার ব্যবস্থা করা বৈধ হয় না। কোনো চাকুরিজীবি ও কর্মচারী জাকাত-ফিতরা খাওয়ার উপযোগী হলে তাকে ফিতরার টাকা দেওয়া যাবে, কিন্তু এ টাকা বেতন হিসেবে ধরা যাবে না। পক্ষান্তরে জাকাত খেতে পারে- এমন না হলে ফিতরার টাকা দেওয়া-নেওয়া কোনো অবস্থাতেই জায়েয হবে না। -আদ্দুররুল মুখতার: ২/৩৬৮

মাসয়ালা: ঈদের নামাজের পূর্বেই ফিতরা আদায় করে দেওয়া উত্তম, তবে পরে দিলেও আদায় হয়ে যাবে। হজরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে সদকাতুল ফিতর আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। -মুসলিম শরিফ, হাদিস: ১৬৩৬, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১৬০৯

সদকাতুল ফিতরের সম্পর্ক রোযার সাথে। ঈদের দিন সুবহে সাদিকের সময় হতে সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হয়। কাজেই রোযা পালন শেষে ঈদের খুশিতে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক মুসলমানের পরিবারের প্রতিটি সদস্য এমনকি ঈদের দিন সুবহে সাদেকের পূর্বে যে সন্তান জন্মগ্রহণ করবে তার পক্ষ থেকেও তা আদায় করা ওয়াজিব।

সাদকায়ে ফিতর কার পক্ষ থেকে দেওয়া ওয়াজিব?

নেসাব পরিমাণ মালের মালিক যিনি,সদকায়ে ফিতর আদায় করা তার পক্ষ থেকে ওয়াজিব।
না-বালিগ সন্তান নিজে মালিকে নিছাব না হলে তার পক্ষ থেকে সাদকায়ে ফিতর আদায় করা পিতার উপর ওয়াজিব। আর সে যদি মালিকে নিছাব হয়,তাহলে তার মাল থেকে সাদকায়ে ফিতর আদায় করতে হবে।(শরহে বেকায়া ১খন্ড সাদকায়ে ফিতর অধ্যায়)

আকিল,বালিগ সন্তানের পক্ষ থেকে সাদকা ফিতর আদায় করা বাবার জন্য জরুরী নয়। কিন্তু সে যদি বাবার লালন-পালনে থাকে আর পিতা তার পক্ষ থেকে আদায় করে দেন তবে তা দুরস্ত বা বৈধ আছে।(বাহরুর রায়িক ২/২৫২, হিদায়া ১/২০৯)(বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৩৩-৫৩৬)

নিজ গৃহের কাজের লোকদের পক্ষ থেকে সদকায়ে ফিতর আদায় করা উচিত তবে আবশ্যক নয়।(কিতাবুল ফাতাওয়া ৩/৩৫৭) স্ত্রীর সাদকায়ে ফিতর স্বামীর উপর ওয়াজিব নয়। তবে স্ত্রীর পক্ষ থেকে আদায় করে নিলে আদায় হয়ে যাবে । এতে অনুমতি নিয়ে হোক বা না হোক। (হিদায়া ১/২০৯, দুররে মুখতার ৩/৩৮৫)

যে রোযা রাখেনি তার উপরও সাদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হবে যদি সে মালিকে নেসাব থাকে নির্ধারিত সময়ে। (বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৩৫, ফাতাঃআলমগিরী ১/১৯২ সদকায়ে ফিতর অধ্যায়)

সদকায়ে ফিতর কখন আদায় করবেন? উত্তম হল ঈদের নামাযের আগে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা । এসময় যদি আদায় না করা হয়,তবে পরে যখন ইচ্ছা আদায় করতে পারবে। পরে যখনই তা আদায় করা হবে আদায় বলে গণ্য হবে,কাযা বলা যাবেনা । (বাদায়ে উস সানায়ে ২/৫৪৬)

সদাকায়ে ফিতর সম্পর্কিত হাদীস সমূহে মোট পাঁচ প্রকার খাদ্যের বর্ণনা পাওয়া যায়: যব, খেজুর, পনির,কিসমিস ও গম।

সাদাকাতুল ফিতর যব,খেজুর,পনির বা কিসমিস দ্বারা আদায় করলে প্রত্যেকের জন্য এক সা’ দিতে হবে । আর গম বা গমের আটা বা গমের ছাতু দ্বারা আদায় করলে আধা ‘সা’ দিতে হবে।এটা হল ওজনের দিক দিয়ে তফাত। আর মূল্যের দিক থেকে তো পার্থক্য রয়েছে।অর্থাৎ গম,গমের আটা বা গমের ছাতু যদি হয়,তবে তা পৌনে দুই সের সাবধানতাবশত পুরো দুই সের দিতে হবে । এর সমপরিমাণ মূল্যও দেওয়া যায়। আর যদি খেজুর,কিসমিস,যব,যবের ছাতু এসবের কোন একটি দ্বারা ফিতরা দেয়া হয়,তাহলে ৩ কিলো দেড়শ গ্রাম অথবা এর সমপরিমাণ মূল্য দিতে হবে।বর্ণিত যে বস্তুর হিসাবে দেওয়া হোক কিছু বেশি দেওয়াই ভালো। কারণ সামান্য কম হলে ফিতরা আদায় হবেনা। আর বেশি দিলে সওয়াব পাওয়া যায়। (আলমগীরী১/১৯৩ ও শরহেবেকায়া ১খন্ড সাদকায়ে ফিতর অধ্যায়)

মুসাফির ব্যক্তি যদি মালিকে নেসাব হয় তাহলে ঈদের দিন সে যেখানে থাকবে সেখানের মূল্য হিসাবে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করবে । (আদ্দুরুল মুনতাকা ১/২২৬)

বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশ প্রবাসী কোন ব্যক্তি যদি বাংলাদেশে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতে চান তাহলে যে দেশে অবস্থান করছেন সেখানকার মূল্য হিসাবে তিনি ফিতর আদায় করবেন। এটাই অতি বিশুদ্ধমত । তবে হ্যা বাংলাদেশের মূল্য ধরে দিলেও দেয়া যাবে তা বৈধ আছে। প্রবাসীদের জন্য উত্তম হলো যে দেশের মূল্য হিসাব করা হলে সাদাকা গ্রহণকারী গরীব মিসকিন প্রমূখদের উপকার বেশি হবে সেখানকার মূল্য বিবেচনা করা।

বর্তমানে লন্ডন আমেরিকা সৌদি আরব ইত্যাদি উন্নত দেশেগুলোতে অবস্থানরত প্রবাসীগণ স্বীয় বাংলাদেশে ফিতরা আদায় করতে চাইলে আপনি যে দেশে আছেন সেখানকার মূল্য ধরে টাকা পাঠিয়ে দিবেন।এতে পৌনে দুই সের আটা বা গম ইত্যাদির মূল্য বেশি পরিমাণে আসবে।যা সাদাকা গ্রহণকারীদের জন্য উপকারী।অনুরূপ নিয়মে দেশে অবস্থানরত না-বালিগ সন্তানের পক্ষ থেকেও তাদের ফিতরা প্রবাসী পিতাকে আদায় করতে হবে। (আদ্দুরুল মুনতাকা ১/২২৬, বাদায়েউসসানায়ে২/৫৪৭)

যদি কেউ কৃষিজাত ফসল যেমন ধান-চাউল ইত্যাদি দ্বারা সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতে চায় তাহলে এতে ওজন গ্রহনযোগ্য নয়; বরং এক্ষেত্রে মূল্য বিবেচ্য হবে। অর্থাৎ এক ছা’ খেজুর বা আধা ছা’ গমের বাজার দর যা আসে সে মূল্যের ধান-চাউল আদায় করতে হবে। (দুররে মুখতার ৩/৩১৯)

রামাজানে সাদকায়ে ফিতর আদায় করা? রামাজান মাসে ঈদের দিনের আগে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা জায়েজ আছে। চাই তা রামাজানের যে কোন দিনেই হোক না কেন।

সদকাতুল ফিতর সম্পর্কিত হাদীসগুলো পর্যালোচনা করলে এ বিষয়ে মোট পাঁচ প্রকার খাদ্যের বর্ণনা পাওয়া যায়। যব, খেজুর, পনির, কিসমিস ও গম। এ পাঁচ প্রকারের মধ্যে যব, খেজুর পনির ও কিসমিস দ্বারা সদকা ফিতর আদায় করতে চাইলে প্রত্যেকের জন্য এক ‘সা’ দিতে হবে। কেজির হিসাবে যা তিন কেজি ১৮৩ গ্রাম। আর গম দ্বারা আদায় করতে চাইলে আধা ‘সা’ দিতে হবে। কেজির হিসাবে ১ কেজি ৫৯১.৫ গ্রাম হয়। এটা হল ওজনের দিক দিয়ে তফাত। আর মূল্যের দিক থেকে তো পার্থক্য রয়েছেই। এ সব পণ্যের বাজার দার থেকে যা সকলেরই জানা।

হাদীসে এ পাঁচটি দ্রব্যের যে কোনটি দ্বারা ফিতরা আদায়ের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যেন মুসলামনগণ নিজ নিজ সামর্থ্য ও সুবিধা অনুযায়ী এর যে কোন ১টি দ্বারা তা আদায় করতে পারে। এখন লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, সকল শ্রেণীর লোক যদি সবচেয়ে নিম্ন মূল্যমানের দ্রব্য দিয়েই নিয়মিত সদকা ফিতর আদায় করে তবে হাদীসে বর্ণিত অন্য চারটি দ্রব্যের হিসাবে ফিতরা আদায়ের উপর আমল করবে কে?

আসলে এ ক্ষেত্রে হওয়া উচিত ছিল এমন যে, যে ব্যক্তি উচ্চ মূল্যের পণ্য দিয়ে সদকা ফিতর আদায় করার সামর্থ্য রাখে সে তা দিয়েই আদায় করবে। যার সাধ্য আরো কম সে তাই দিবে। এর চেয়ে কম আয়ের লোকেরা আরো কম দামের পণ্যের হিসাব গ্রহণ করতে পারে। এটিই উত্তম নিয়ম। এ নিয়মই ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম, সাহাবা-তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনের স্বর্ণযুগে। এ পর্যন্ত কোথাও দূর্বল সূত্রেও একটি প্রমাণ মেলেনি যে স্বর্ণযুগের কোন সময়ে সব শ্রেণীর সম্পদশালী সর্ব নিম্ন মূল্যের দ্রব্য দ্বারা সদকা ফিতর আদায় করেছেন।

এ পর্যন্ত কোথাও দূর্বল সূত্রেও একটি প্রমাণ মেলেনি যে স্বর্ণযুগের কোন সময়ে সব শ্রেণীর সম্পদশালী সর্ব নিম্ন মূল্যের দ্রব্য দ্বারা সদকা ফিতর আদায় করেছেন।

এখানে এ সংক্রান্ত কিছু বরাত পেশ করা হচ্ছে।

হাদীসে পাকে ইরশাদ হয়েছে, নবী কারীম (দ.) কে সর্বোত্তম দান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ইরশাদ করেন, দাতার নিকট যা সর্বোৎকৃষ্ট এবং যার মূল্যমান সবচেয়ে বেশি। –সহীহ বুখারী ৩/১৮৮

সাহাবায়ে কেরামের আমল

(ক) হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন, আমরা সদকা ফিতর আদায় করতাম এক ‘সা’ খাদ্য দ্বারা অথবা এক ‘সা’ যব অথবা এক ‘সা’ খেজুর, কিংবা এক ‘সা’ পনির বা এক ‘সা’ কিসমিস দ্বারা। আর এক ‘সা’ এর ওজন ছিল নবী করীম সা. এর ‘সা’ অনুযায়ী। –মুআত্তা মালেক পৃষ্ঠা ১২৪

(খ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. সারা জীবন খেজুর দ্বারাই সদকা ফিতর আদায় করেছেন। তিনি মাত্র একবার যব দ্বারা আদায় করেছেন। –আল ইসতিযকার হাদীস নং ৫৯০

ইবনে কুদামা রহ. আবু মিজলাযের বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন, এ বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায় যে, সাহাবায়ে কেরাম অধিকাংশই যেহেতু খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করতেন তাই ইবনে উমর রা. সাহাবাদের তরীকা অবলম্বন করতঃ সারা জীবন খেজুর দ্বারাই আদায় করেছেন। এ প্রসঙ্গে ইবনে উমরের ভাষ্য হল, সাহাবীগণ যে পথে চলেছেন আমিও সে পথেই চলতে আগ্রহী।

সাহাবায়ে কেরামের যুগে আধা সা গমের মূল্য এক সা খেজুর সমপরিমাণ ছিল। নবী কারীম সা. এর যুগে মদীনাতে গমের ফলন ছিল না বললেই চলে। পরবর্তীতে হযরত মুআবিয়া রা. এর যুগে ফলন বৃদ্ধি পেলেও মূল্য ছিল খুব বেশি। সদকা ফিতরের জন্য নির্ধারিত খাদ্যসমূহের মধ্যে গমের মূল্য ছিল সবচেয়ে বেশি। একাধিক বর্ণনায় এসেছে যে, সেকালে আধা ‘সা’ গমের মূল্য এক সা খেজুরের সমপরিমাণ ছিল।

হযরত মুআবিয়া রা. এর যুগে গমের ফলন বৃদ্ধি পেলে আধা সা গমকে সদকা ফিতরের অন্যান্য খাদ্য দ্রব্যের এক ‘সা’র মত গণ্য করা হত। –আল ইস্তিযকার ৯/৩৫৫

তাহলে বুঝা গেল যে, হযরত মুআবিয়া রা. এর যুগে গম দ্বারা সদকা ফিতর আদায়ের প্রচলন বেড়েছিল। এর কারণ হল, তখন গমই ছিল সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বোচ্চ মূল্যমানের খাদ্য। এ সময় হযরত ইবনে উমর রা. সাহাবীদের অনুকরণে খেজুর দ্বারাই সদকা ফিতর আদায় করতেন। তখন তাঁকে আবু মিজলায রহ. বললেন, আল্লাহ তায়ালা তো এখন সামর্থ্য দিয়েছেন। আর গম খেজুরের চেয়ে অধিক উত্তম।

অর্থাৎ আপনার সামর্থ্য রয়েছে বেশি মূল্যের বস্তু সদকা করার। তবুও কেন খেজুর দ্বারা তা আদায় করছেন। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, আমি সাহাবীদের অনুকরণে এমন করছি।

যাক আমাদের কথা ছিল, সাহাবায়ে কেরাম গম দ্বারা এজন্যই সদকা ফিতর আদায় করতেন যে, এর মূল্য সবচেয়ে বেশি ছিল। হাদীসে পাঁচ প্রকারের খাদ্য দ্রব্যের মধ্যে বর্তমানে গমের মূল্য সবচেয়ে কম। তাহলে এ যুগে সর্ব শ্রেণীর জন্য এমনটি সম্পদশালীদের জন্যও শুধুই গম বা তার মূল্য দ্বারা সদকা ফিতর আদায় করা কী করে সমীচীন হতে পারে?

বড়ই আশ্চর্য! পুরো দেশের সব শ্রেণীর লোক বছর বছর ধরে সর্বনিম্ন মূল্যের হিসাবে ফিতরা আদায় করে আসছে। মধ্য বিত্ত ও উচ্চবিত্ত সকলেই ফিতরা দিচ্ছে একই হিসাবে জনপ্রতি ৪০/৪৫ টাকা করে। মনে হয় সকলে ভুলেই গেছে যে, গম হচ্ছে ফিতরার ৫টি দ্রব্যের সবচেয়ে নিম্ন মূল্যের।

সুতরাং আমরা এ দেশের ফিতরা আদায়কারী ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে তারা যেন যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী হাদীসে বর্ণিত দ্রব্যগুলোর মধ্যে তুলনামূলক উচ্চমূল্যের দ্রব্যটির হিসাবে ফিতরা আদায় করেন। পনির, কিসমিস, খেজুর কোনটির হিসাব যেন বাদ না পড়ে। ধণী শ্রেণীর মুসলিম ভাইদের জন্য পনির বা কিসমিসের হিসাবে ফিতরা আদায় করা কোনো সমস্যাই নয়। যেখানে রমযানে ইফতার পার্টির নামে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়, ঈদ শপিং করা হয অঢেল টাকার, সেখানে কয়েক হাজার টাকার ফিতরা তো কোন হিসাবেই পড়ে না। যদি এমনটি করা হয় তবে যেমনিভাবে পুরো হাদীসের উপর মুসলমানদের আমল প্রতিষ্ঠিত হবে এবং একটি হারিয়ে যাওয়া সুন্নত যিন্দা করা হবে, তেমনি এ পদ্ধতি দারিদ্রবিমোচনে অনেক অবদান রাখবে। গরীব-দুঃখীগণের মুখেও হাসি ফুটে উঠবে পবিত্র ঈদের দিনে।

© 2023 Ramadan Prayers | Kanzul Hikmah iT Team